গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় গ্রামে বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া যমুনা নদীর প্রায় ৪০ মিটার একটি বাঁধ পুনঃনির্মাণ না করায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ একরেরও বেশি জমির ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী। বাঁধের ভাঙ্গা ওই অংশের সাথে যুক্ত একটি খাল দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ধান গাছ নষ্ট হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভাঙ্গামোড় ও কাতলামারী গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে ভাঙ্গামোড়, সানকিভাঙ্গা ও ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ডানতীর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিয়ে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে অনেকটা এলাকা উন্মুক্ত থাকলে প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতো।
পরে কয়েক বছর আগে কাতলামারী গ্রাম থেকে দক্ষিণ দিকে সানকিভাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ তৈরি করে দেয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু গত বছরের আগষ্ট মাসে এই বাঁধটির ভাঙ্গামোড় গ্রামে প্রায় ৪০ মিটার অংশ ভেঙ্গে গেলে সেটি আর পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই বাঁধটি নির্মাণ না করায় উপরমহলের নির্দেশ ছাড়া তারা সেই বাঁধ পুনঃনির্মাণ করতে পারবে না বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানের চারা লাগানোর জন্য জমির মালিক ও কৃষকরা নদীর সাথে যুক্ত খালটির ধারের জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। কাতলামারী ও ভাঙ্গামোড় গ্রামের প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে। বাঁধের ভাঙ্গা ওই অংশের পানিতে মাছ ধরছেন কয়েকজন। বর্তমানে নদীর সাথে যুক্ত এই খালটি ভাঙ্গামোড় থেকে কাতলামারী গ্রাম ও কুকড়ারহাট বাজার পর্যন্ত গেছে।
ভাঙ্গামোড় গ্রামের কৃষক বকুল মিয়া (৪২) বলেন, প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে আমার ৩০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছি। বাঁধের ভাঙ্গা ওই অংশ মেরামত না করায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই নিচু ধানের জমিগুলো তলিয়ে যাবে। ফলে ফসলের ক্ষতি হলে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা। এজন্য আপাতত যেভাবেই হোক বাঁধের ভাঙ্গা ওই অংশে কোন কিছু দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।
ভাঙ্গামোড় গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ভাঙ্গা বাঁধের ওই অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে ৫০০ একরেরও বেশি জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বাঁধটি এখনো পুনঃনির্মাণ করা হলোনা। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তারপরও ভাঙ্গা বাঁধ পুনঃনির্মাণ কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ এই বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করা খুব জরুরী ছিল।
ভরতখালীর ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) বজলুর রহমান মুক্তা বলেন, নদীতে পানি কম জন্য ধানক্ষেত এখনো নষ্ট হয়নি। তবে নদীতে পানি বাড়লে ওই ভাঙ্গা বাঁধটি দিয়ে পানি প্রবেশ করে জমির ধান অবশ্যই নষ্ট হবে। সম্প্রতী শুনেছি ভাঙ্গা বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার কথা। সেটি যখন এখনো হয়নি, তাহলে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব।
সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিঠুন কুন্ডু মুঠোফোনে বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা অনুযায়ী যেসব বরাদ্দ পাওয়া গেছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু মেরামত করা হয়েছে আবার কিছুর কাজও চলছে। কিন্তু এই বাঁধটি পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই সেটি পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কাজটা করে দেওয়া হবে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বলেন, আপনি সেসময় বলেননি তো। আমাদের কি সবসময় মনে থাকে। মার্চ মাস সেই কবেই চলে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করলে তো সেসময় করা যেত। আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে হলে ওটা করে দেওয়া যাবে। এই মুহুর্তে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোন সুযোগ নেই। ওটা বড় প্রজেক্ট।
নদীতে পানি হলে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা তো হয়ই। এটা আমাদের কাজ না তো, আমি তো সেটা আপনাকে বলেছি। আমি যেটা করছি কোঅর্ডিয়ালিটির কারণে করছি। পরের বার বিষয়টা দেখবো।