সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামে মেয়ের হাতে মা খুনের ঘটনায় অবশেষে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। পাটকেলঘাটা থানার এসআই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে নিহতের মেয়ে টুম্পা খাতুন (২৪) ওরফে মারিয়াকে একমাত্র আসামি করে পাটকেলঘাটা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন।
এদিকে, ঘটনার রাতে নিহত মমতাজ খাতুনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর এলাকা ছেড়ে কৌশলে পালিয়ে যায় টুম্পা খাতুন। এরপর থেকে টুম্পাকে এলাকায় আর দেখা যায়নি। মায়ের লাশ দাফনের সময়ও টুম্পা নিহত মায়ের পাশে ছিল না। মমতাময়ী মায়ের শেষ মুখটুকুও সে দেখিনি। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত টুম্পা খাতুনকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রেজাউল ইসলাম রেজা জানান, মমতাজ বেগম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। পাটকেলঘাটা থানার এসআই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে নিহতের মেয়ে টুম্পা খাতুনকে একমাত্র আসামি করে এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেছে (যার মামলা নং ৫)।
তিনি বলেন, লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ মনে করে। বিধায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন। তিনি থাকলে আসামি টুম্পা খাতুন পালিয়ে যেতে পারত না। আসামি টুম্পা খাতুনকে গেফতারের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টম্বর সোমবার সকালে নগরঘাটা গ্রামের মৃত আব্দুর সবুর সরদারের স্বামী পরিত্যক্ত কন্যা টুম্পা খাতুন পারিবারিক কলহের জেরধরে তার মা মমতাজ খাতুন (৫০) কে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এতে মমতাজ খাতুন মাথায় ও ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতে খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে এলাকায় প্রচার দেয় মেয়ে টুম্পা খাতুন। পুলিশ ঘটনার রাতেই নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরই মধ্যে কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় টুম্পা খাতুন।
অপরদিকে টুম্পা খাতুনের বিয়ে হয় সাতক্ষীরার সংরক্ষিত আসনের এমপি মিসেস রিফাত আমিনের ছেলে রুমনের সাথে। প্রায় আড়াই বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। টুম্পা খাতুন প্রায় তার মাকে মারধর করতো। স্বামাীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে টুম্পা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উশৃঙ্খল জীবন ছিল তার। তার একমাত্র ভাই শরীফও নেশাগ্রস্ত। টুম্পার একটি ৩ বছর বয়েসের ছেলে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মমতাজ খাতুনের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়ে টুম্পা খাতুন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। প্রায় সারাটা দিন হাসপাতালের বারান্দায় মায়ের লাশ পড়ে থাকলেও পাশে একমাত্র মেয়ে টুম্পা খাতুনের দেখা মেলেনি। একমাত্র মাদকাসক্ত ছেলে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি। লাশ যখন পুলিশের কাছ থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজন গ্রহণ করে তখনও মেয়ে টুম্পা খাতুন পাশে ছিল না।
এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে নিহতের মেয়ে টুম্পা। মা হত্যার দায় থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করছে সে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আগে থেকে টুম্পার রয়েছে ওঠা-বসা। সেই সব রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মা হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা থেকে এ যাত্রায় বাঁচার চেষ্টা করছে টুম্পা।