Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'কামড়ের দাগও ছিলো আমার কলিজাটার গায়ে'

আট মাস ধরে ১০ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন; গৃহকর্মীর জামিন নামঞ্জুর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৫০ AM
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:০০ PM

bdmorning Image Preview


‘আমার মাইয়াডার গায়ে এমন কোনো জায়গা নেই যেহানে আঘাতের চিহ্ন নাই। কি কমু আমি বাপ হইয়া! কামড়ের দাগও ছিলো আমার কলিজাটার গায়ে। এরম পশুর মতোন কাজ করছে আমার মাইয়াডা আটমাস ধইরা কেমনে সহ্য করছে সেইডা চিন্তা কইরাই আমার এক একটা দিন মরণের মতো মনে হয়।' কাঁদতে কাঁদতে বললেন একজন অসহায় বাবা।

‘সারা শরীরে আঘাতের কালশিটে দাগ, দীর্ঘদিনের লাগাতার নির্যাতনের চিহ্ন, দগদগে ক্ষতও রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে দীর্ঘ আট মাস ধরে এমন কোনও নির্যাতন নেই, যা হয়নি শিশুটির ওপর। নিস্তেজ কঙ্কালসার দেহটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানার সঙ্গে লেপ্টে আছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বাতাস, খাদ্যগ্রহণের শক্তিটুকু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কৃত্রিম উপায়ে চলছে শ্বাসপ্রশ্বাস তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তা সারা টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়েছে।' হাসপাতালে গিয়ে এম চিত্রই দেখা যায় যা গা শিউরে উঠার মতোই।

১০ বছর বয়সী এই শিশুটির নাম রোকসানা আক্তার। আট মাস আগে ঢাকার ওয়ারী এলাকার ইলিয়াস হোসেন পলাশ নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে (সেলিম টাওয়ার, বাড়ি-৪৫, লালচাঁন রোড) গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের রাসেল শেখের মেয়ে।

আট মাস ধরে ইলিয়াস হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া, তার ভাই ইব্রাহিম শিশুটির ওপর নির্যাতন চালান শারিরীক, মানসিক, যৌন সবরকম বর্বর আচরণ করা হয় এই শিশুটির উপর।

দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে রোকসানা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারটি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে স্বজনদের খবর দিয়ে ঢাকায় এনে গত ১৭ আগস্ট রাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রোকসানাকে। মরণাপন্ন রোকসানাকে ১৯ আগস্ট নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ২৪ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের রোকসানার কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন বলেন, '২৪ আগস্টে ভর্তি হলেও আমি শিশুটির দায়িত্বে আছি গত সপ্তাহ থেকে। অবস্থা কখনো ভালোর দিকে আবার কখনো কখনো আশা ছেড়ে দেয়ার মতোই। কারণ, পুরোপুরি শক্তিশুণ্য হয়ে আছে তার শরীর। কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। সেটাও ঠিকমতো নিতে পারছেনা সে।'

এদিকে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত মঙ্গলবার (১১সেপ্টেম্বর) সকালে নড়াইল আদালতে হাজির হন গৃহকর্ত্রী সোনিয়া। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। নড়াইল চিফ জুড়িশিয়াল আদালতের বিচারক (লোহাগড়া আমলী আদালত) মো. জাহিদুল আজাদ এই রায় দেন

নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বিডিমর্নিংকে বলেন, 'যা ঘটেছে তা আমরা প্রথম থেকেই অবগত। এই বর্বর অত্যাচারের সাথে জড়িত আসামিরা যেন জামিন না পান সেই চেষ্টাই আমরা করছি। একইসাথে বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে তৎপর রয়েছে।'

এর আগে গত ২২ আগস্ট রোকসানাকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ইলিয়াস হোসেন, তার স্ত্রী সোনিয়া, সোনিয়ার ভাই ইব্রাহিম সরবরাহকারী সালেহা বেগমের নাম উল্লেখ করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা রাসেল শেখ

বাবা রাসেল শেখের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ডুকরে কেঁদে উঠেন আর কপাল চাপরাতে চাপরাতে বলেন, ‘সবই আমাদের গরীব হওয়ার অভিশাপ। গরীব না হলে কি আমার ফুলের মত মেয়েটারে এই বয়সে কাজ করতে পাঠাই? আর আমার মেয়ের সাথে এমন অবিচার হয়? আমার মেয়েটা আর কতোদিন বাঁচবে জানিনা, তবে এই বিচার না পেলে আমিও মেয়ের কাছেই চলে যাবো।'

নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. গোলাম নবী বিডিমর্নিংকে বলেন, সোনিয়াকে যেভাবে নিষ্ঠুরতম নির্যাতন করা হয়েছে তা চোখে দেখা যায় না। এই মামলার আসামিদের যেন জামিন না হয় সে ব্যাপারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা এই জঘন্য কাজ যারা করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই

Bootstrap Image Preview