নদীমাতৃক বাংলাদেশের একটি নদীর নাম বালু নদী। নদীর নামই বলে দিচ্ছে নদীতে কতটুকু জল আর কতটুকু বালু।বুড়িগঙ্গার একটি শাখা এই বালু নদীতে ঢাকার বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত জল নদীর স্বচ্ছ জলের ধারাকে কালো রঙে ঢেকে ফেলেছে অনেক আগেই। তবুও বর্ষা আসলে বালু নদী যৌবন ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে বার বার।
বালু নদীর কদর আছে তাদের কাছে, যারা জানতো যৌবনের বালু নদীকে। খর স্রোতধারায় এক সময়ের বালু নদীর এখন শুধু নামটিই আছে। শুধু বর্ষাতেই কয়েক মাসের জন্যে নদীটি আকৃতি ধারণ করে।বছরের বাকি সময়গুলোতে জল শূন্য বালু নদী প্রকৃতির কাছে শুধু অপেক্ষার হাত পেতে থাকে কখন আসবে বর্ষা। কখন ভরবে কানায় কানায় জল।
বর্ষার জল বালু নদীকে আরো বেশি যৌবনদিপ্ত আকর্ষণীয় করে তোলে পাড়ের কাশফুল, নৌকা আর বালু নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানো দর্শনার্থী দিয়ে। এটাই যেন বালু নদীর আসল বৈশিষ্ট। এটাই যেন বালু নদীর যৌবন। প্রকৃতিতে এখন বর্ষা না থাকলেও অসময়ের বৃষ্টি বালু যৌবন দিয়েছে কানায় কানায় জল দিয়ে।
পরিষ্কার পানিতে গোসল কারার লোভ সামলাতে না পেরে দেখতে আসা অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীর জলে। যে নদীর পানি বছরের অন্য সময়ে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হয় না সে নদীর পানিতে দিব্বি মনের আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন অনেকেই। বর্ষায় যেন বালু নদীর কাছে পরম আর্শীবাদ। বর্ষা এলেই নদীর পাড়ে কাশফুলের রাজত্ব দেখা যায়। কাশফুলে মনোরম পরিবেশে কেউ হয়ে ওঠেন কবি কেউ হারিয়ে যান প্রকৃতির অপার মায়ায়।
প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরতে আসা এই দৃশ্যগুলো অনেকেই বন্দি করেন ক্যামেরায়। বালু নদীর জলেছোট ছোট কচুরিপানা ঢেউয়ের তালে তালে ছন্দের খেলা করে।
দর্শনার্থীরা জানান, জনাকীর্ণ শহরের পাশে এই নদীই ক্লান্তির অবসাদ দেয় আমাদের। কিন্তু এই নদীর রক্ষনাবেক্ষণে দৃষ্টি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এটাকে পর্যটনের স্থান বানালে এখান থেকে রাজস্ব আয় হতে পারে সরকারের।
বালু নদীর যৌবন দেখা ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিডিমর্নিংকে জানালেন তার মনের কথা। আঁই এ্যাই নদীর যৈবন দ্যাইখছি হেই ছোড বেইলা থেইক্কা। এহনতো এই নদী কিছুই না। কত মাইনসে আহে আর কত মাই্নসে যায়, কিন্তু নদীর কতা কেউ ভাবে না। এই বৃদ্ধ যেন বালু নদীর মনের কথাই বললেন আমাদের।
বালু নদী দেখতে যারা আসেন, তারা চলে যান সময় ফুরালে। তাদের ক্যামেরায় ধারণ করা বালু নদী থাকে ওয়ালের ফ্রেমে কিংবা ইলেকট্টনিক্স ডিভাইসে। সেই ছবি কখনোই বদলায় না। কিন্তু বাস্তবের বালু নদী বদলে যায় দিনকে দিন। বালু নদীতে যেন স্রোত ফিরে আসে, বালু নদী যেন সারাবছর স্নিগ্ধ সতেজ থাকে সেটি সবার প্রত্যাশা।