Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাপাহারে ১৩ সেপ্টেম্বরে স্বজনদের কথা স্মরণ করে ডুকরে কেঁদে ওঠে উপজেলাবাসী

গোলাপ খন্দকার, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ AM
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ AM

bdmorning Image Preview


প্রতি বছরের ন্যায় সাপাহারবাসীদের কাঁদাতে ও ১৯৭১সালের ভয়াল দিনটি স্মরণ করিয়ে দিতে আবারো ফিরে এলো সেই ১৩ই সেপ্টেম্বর। এই দিনে উপজেলার বেশ কয়েকজন স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা শত্রু সেনাদের কবল থেকে সাপাহারবাসীকে মুক্ত করতে গিয়ে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ও বেশ কয়েকজন আহত হন।

তাই প্রতি বছর এই দিনে অনেক সন্তান হারা মা, ভাই হারা বোন তাদের সেই নিহত সন্তান ও স্বজনদের কথা স্মরণ করে নিরবে চোখের পানি ফেলে ও মাঝে মধ্যে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

এলাকার কয়েকজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট থেকে জানা যায়। ১৯৭১সালে দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হলে দেশের অন্যান্য এলাকার মত তৎকালীন স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকারদের বেপরোয়া চলাফেরায় সাপাহার উপজেলা পাকিস্তানী বাহিনীর দখলে চলে যায়।

বর্তমান উপজেলা সদরের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এলাকাকে তারা তাদের ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তোলে আর এখান থেকেই তারা প্রতিদিন এলাকার চিহিৃত রাজাকারদের দেওয়া নির্দেশ মত বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সাধারণ নিরিহ মানুষের ধন-সম্পদ লুটপাট, মা বোনদের ইজ্জত হরণ করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। 

যুদ্ধের প্রায় ৬মাস অতিবাহিত হলে সেপ্টেম্বর মাসে বাঙ্গালিদেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মত অবস্থায় সাপাহারবাসীকে মুক্ত করতে সাপাহার উপজেলার ও পার্শ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার ৮০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি সংগঠিত দল সাপাহারে অবস্থানরত শক্তিশালী তৎকালীন পাকিস্তানী মিলিটারী বাহিনী লেঃ শওকত আলীল ওই সু-সজ্জিত ঘাঁটিটি চীরতরে উৎখাত করে। সাপাহারবাসীকে নরপিচাশদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য গোপনে এক বৈঠক করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং  যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় তারা।

শেষে সময় ও সুযোগ বুঝে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সজ্জিত দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি উপদলকে সাপাহার-মধইল রাস্তার মধইল ব্রিজে বাহিরের শত্রুদের গতি বিধি দেখার জন্য রাখা হয়। আর মূল দলটি ওই বিদ্যালয়ের উত্তর পূর্ব দিকে একটি ধান ক্ষেতে অবস্থান নেয়।

ঠিক এসময় দেশের রাজাকার আলবদর মারফত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের সংবাদ পৌঁছে যায় শত্রু শিবিরে তাৎক্ষনিক তারাও যুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহন করে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে ভোররাতে আক্রমন চালায় ধান ক্ষেতে অবস্থান নেওয়া দলটি, পাইলট মাঠ থেকে শত্রু সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ঘন্টাকালব্যাপী এক টানা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধার দলটি যখন পাক সেনাদের প্রায় কোন ঠাসা করে ফেলেছিল ঠিক তখনই ভোরের আভাস পেয়ে মধইল ব্রীজে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার উপদলটি সেখান থেকে সরে পড়ে।

আর সে মহুর্তে পত্নিতলায় উপজেলা সদর ও মধইল বাজার এলাকা থেকে অসংখ্য পাকসেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্র-স্বস্ত্র নিয়ে সাপাহারে প্রবেশ করে। নতুন শত্রু সেনার অনুপ্রবেশে শত্রুবাহিনীর শক্তি দ্বিগুন হারে বেড়ে যায় এবং তারা এক সময় স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার দলটিকে ধরাশায়ী করে ফেলে।

এসময় শত্রু সেনার গুলির আঘাতে যুদ্ধের মাঠেই শাহদাত বরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, আইয়ুব আলী, আব্দুল হামিদসহ ১৫জন।

আহত হন মুক্তিযোদ্ধা মনছুর আলী, এস এম জাহিদুল ইসলাম, দলনেতা আহম্মদ উল্লাহ, সোহরাব হোসেন, নুরুল ইসলামসহ অনেকে। এছাড়া শত্রুদের হাতে জীবিত ধরা পড়েন ৮জন।

এসময় শত্রু সেনারা যুদ্ধের মাঠ থেকে সাপাহারের তিলনা গ্রামের আবু ওয়াহেদ গেটের, মহাদেবপুর উপজেলার এসএম জাহিদুল ইসলামসহ ৮জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে মধইল স্কুলের ছাদে তুলে ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে লাথি মেরে লাশ ছাদ থেকে মাটিতে ফেলে দেয়। অপর ২জনকে মহাদেবপুর এনে একটি কুপে ফেলে দিয়ে জীবন্ত কবর দেয় আর দুজনকে নাটোর জেলাসদরে ধরে এনে তৎকালিন তাদের তৈরিকৃত রাজবাড়ীর জেলখানায় বন্দী করে রাখে।

পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এস এম জাহিদুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনার দিতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের সামনে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন ও ঘটনার বর্ণনা দেন।

তাই এই দিনে সাপাহারে অনেকে দিনটির কথা স্মরণ করে অঝোরে তাদের চোখের পানি ফেলেন ও ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

উল্লেখ্য যে, প্রতিবছর দিনটি ঘুরে এলেও দিনটি স্মরণে কোন স্মরণসভা কিংবা দিবসটি উদযাপন করা না হলেও সাপাহারের সাংবাদিকগণ তাদের স্ব-স্ব পত্রিকায় দিনটি স্মরণে দিবসটির বর্ণনা লিখে ঘটনাবলির স্মরণ করে থাকেন। 

Bootstrap Image Preview