Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রবাসের অপূর্ণ ঈদ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০১৮, ০৬:১১ AM
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৮, ০৬:১১ AM

bdmorning Image Preview


সাইদুল ইসলাম (সুমন), সৌদি আরব থেকে-

সারাদিন উৎসব আর প্রিয়জনের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দ ভাগাভাগী করার নামই ঈদ সিয়াম সাধনার একটি মাস পালন শেষ করার মাধ্যমে ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। ঈদ বড়দের চেয়ে ছোটদের বেশী আনন্দ দিয়ে থাকে।

 

তবে ঈদ সবার মনে একটু ছোঁয়া দিয়ে যায়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। বাড়তি একটা ব্যস্ততা থাকা হয় না এই ঈদে। বাঙালি তথা মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব এটি আবেগ, অনুভূতি আনন্দ, উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ঈদ পালিত হয়। সারা বছর দেখা না হলেও ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে সমাজের দেশের পুরনো অনেকগুলো প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হয় এই দিনে। একে অপরের সাথে কোলাকুলির মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান হয়ে থাকে।

কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে ঈদ আনন্দ নিয়ে আসে না আর তারা হলেন প্রবাসী। দেশের সূর্য সন্তান, রেমিটেন্সযোদ্ধা। যারা নিজের কথা না ভেবে পরিবার ও দেশের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকৃত পক্ষে আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের দেহ থাকে বিদেশে আর মন পড়ে থাকে দেশে। প্রতিটি মুহূর্তে আমরা দেশ ও পরিবার নিয়ে ভাবতে থাকি। প্রবাসজীবন মানেই সংগ্রামী জীবন। উন্নয়নের সংগ্রাম, এ জীবন কর্মমুখোর প্রতি নিয়ত সংগ্রাম করে চলতে হয় এইখানে।

ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনের মূল কর্মসূচি।

ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু’একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি অনেকের সাথে আলাপ করে এমনটি প্রকাশ করে সবাই।

একজন নির্মাণ প্রকৌশলী ও সংবাদকর্মী। প্রবাস জীবনে এই প্রথম প্রবাস ঈদ পালন করতে যাচ্ছি, পরিবার মা-বাবা, ভাই-বোন সাথে ঈদ পালন করার মজাই আলাদা। ঈদের ফরজ নামাজ আদায় করে, কবরস্থান জেয়ারত করে শুরু হত এই দিনটি। নতুন পাঞ্জাবি পরে প্রথমেই আম্মুকে সালাম করে শুরু করতাম ভিন্নদের সালাম করা। এক সময় ঈদের সালামী পাওয়া হলেও ধীরে ধীরে তা নিজেকে দিতে হত। তবে সালামী নতুন টাকাটি ছোটদের হাতে দেয়ার মাঝে একটা আনন্দ আছে। বাড়ির সবার সাথে দেখা করে সালামি পর্ব শেষ করে ঈদের নামাজ আদায় করআর জন্য রওনা করা হত। নামাজ আদায় করে বন্ধু বান্ধবদের সাথে কুলাকুলি করে, বাসায় ফিরে আম্মুর হাতে নানা পিঠা ও সেমাই খাওয়ার মধ্য দিয়ে কেটে যেত। দেশের সেই ঈদের আনন্দের দিনগুলো আজ বারবার মনে পড়ছে।

তখন ঈদের জন্য কত কিছু বাজেট করতাম। এত টাকা দিয়ে শপিং করব, ওখানে-সেখানে যাব, ওখানে এটা খাব। এ রকম আরও কত যে পরিকল্পনা করতাম তার শেষ নেই। আম্মু এটা রান্না করো, ওটা রান্না করো, কত বায়না। অনেক বেশি মিস করছি মা তোমাকে আর তোমার হাতের রান্না। মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ঈদ যেন ঈদ নয়, অপূর্ণ ঈদ অনেক কষ্টের ঈদ। দাদা দাদু কে পাইনি, নানা ছিল তিনি ও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গত কয়টি বছর নানুই ছিল একমাত্র যে সালাম করার সাথে সাথে বুকে টেনে নিয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, নানু বলতো তুমি আমার রাজা নাতী সবার সেরা, মিস করবো সব কিছুই এইবার।

কিন্তু এইবার এটি আর হচ্ছে না মিস করতে হবে সব কিছুই ,অন্য সবার মত আমাকে ও প্রবাস জীবনের ঈদ পালন করতে হব। এত সব আনন্দ ছাড়া ঈদ পালন করা খুবই ক্ষতের। প্রতিবার পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিজে নিয়ে প্রছন্দ করে কিনে দিতে হত, কিন্তু এইবার শুধু দূর থেকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েই ঈদের এই আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারলাম, ভোগে সুখ নেই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ প্রবাস জীবনে এই তার জলন্ত প্রমাণ। আর এই পরীক্ষা প্রবাসী সন্তানরাই দিয়ে আসতেছে।

আসব ইনশা আল্লাহ। আর যেদিন সকলকে কাছে পেয়ে আমাদের অপূর্ণ ঈদ হয়ে উঠবে পূর্ণ ঈদ, খুশির ঈদ। দেশে-বিদেশে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক

Bootstrap Image Preview