Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভারতে দাঙ্গা বাধাতে চায় বিজেপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৫২ PM
আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৫২ PM

bdmorning Image Preview


আজ থেকে ২৬ বছর আগে কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরাই উত্তর প্রদেশের উত্তরের শহর অযোদ্ধায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এমন রক্তাক্ত দাঙ্গা ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে চোখে পড়েনি। নিহত হয় দুই হাজারের অধিক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ।

এভাবেই কট্টর হিন্দুত্ববাদকে রাজনীতির প্রধান পুঁজি করে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এরপরই নোট বাতিলকরণ ও সব পণ্য ও পরিষেবার ওপর করারোপের (জিএসটি কর) মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ চাপিয়ে দিয়েছে জনগণের মাথায়।

কিন্তু যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চায় বিজেপি। আগামী এপ্রিলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই ক্রমবর্ধমান সরকারবিরোধী মনোভাবের লাগাম টেনে ধরতে এবং জাতীয় নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আরেকবার বাবরি মসজিদ বিতর্ক ও অযোদ্ধায় রামমন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ছক কষছে দলটি।

ফসল ফলিয়ে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। যার ফলে শত শত কৃষকের আত্মহত্যা, পাহাড় সমান কৃষক অসন্তোষ। কাজ নেই শ্রমিকের। চাকরি পাচ্ছেন না শিক্ষিত তরুণরা। বাড়ছে বেকারত্ব। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর ক্ষোভ ও অবিশ্বাস বেড়েছে। ধস নেমেছে দলের জনপ্রিয়তায়।সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ‘ঘোলা জলে’ ক্ষমতার মাছ শিকারই এর একমাত্র উদ্দেশ্য।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস করতে যে উন্মত্ত জনতা সেদিন মসজিদটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, তাদের নেতৃত্বে ছিল আজকের ক্ষমতাসীন বিজেপি, তাদের মাতৃসংগঠন আরএসএস। আর তাদের সহযোগীর ভূমিকায় ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। আর যে ব্যক্তি এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি হলেন বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লালকৃষ্ণ আদভানি।

নির্বাচন সামনে করে ইতিমধ্যে মন্দির নির্মাণ নিয়ে ফের সরব হয়েছে বিজেপির মাতৃসংগঠন আরএসএস। হুঙ্কার দিচ্ছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দল। মন্দিরের দাবিতে সপ্তাহখানেক আগেই দিল্লির রামলীলা ময়দানে লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থক জড়ো করে ভিএইচপি ও আরএসএস। তাদের এক দফা এক দাবি।

রামমন্দির নির্মাণ করে ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রোববার আলজাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিন্দুত্ববাদ নিয়ে বিজেপির জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক গুরু। হিন্দুদের মধ্যে দলের সমর্থন বাড়াতে সেই সময় মসজিদ ভাঙার কৃতিত্বের ষোল আনাই ব্যবহার করেছিলেন আদভানি। এই কারিশমা করেই অনুসরণ প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময় উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় বর্তমানে বিচারাধীন আছেন।

বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ হিন্দুদের কাছে একটি আবেগীয় ইস্যু। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারের যত ব্যর্থতা তা ভুলিয়ে দিয়ে জনগণকে দলে ভেড়াতে এর চেয়ে সহজ কোনো রাস্তা আর বিজেপির সামনে নেই।

মোদি আর তাদের দলের অন্যান্য নেতারা ভালো করেই জানেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রসঙ্গ ও রামমন্দির তৈরির প্রচারণা ভালো কাজে দিচ্ছে। ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার ফলেই অধিকাংশ হিন্দুই আজ মনে করে, মন্দির নির্মাণ ইস্যুতে শামিল হওয়া তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। তাদের অনেকের বিশ্বাস, মুসলিমরা হচ্ছে ‘বাবুরের বংশধর’।

ভারতে তাদেরকে ‘একঘরে’ করে হিন্দুদের শাসনাধীনে রাখতে হবে। আর এটাই মূলত বিজেপির চাওয়া, যা সবসময় দলটির নেতাদের মন্তব্য ও বক্তব্যে ফুটে ওঠে। মন্দির নির্মাণ প্রচারণাও শুরু করেন আদভানিই।

Bootstrap Image Preview