Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোজ ৫০ টাকার বিনিময়ে ৯ বছরের শিশুরা টানছে ইটবাহী লড়ি

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৩২ PM
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৩২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডির্মিং


সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ

তখনো  ভোরের সূর্য উঠেনি। কিন্তু‘ততক্ষণে  ৯ বছর বয়সী সামিমা, সাহিন কাজ শুরু করে দিয়েছে। রোজ ৫০ টাকার বিনিময়ে ৪০০ ইট টানে তারা। তার মতো প্রতিদিন প্রায় ২০০-৪০০ শিশু নরসিংদী বেলাব উপজেলার পুরান্দিয়াসহ অধিকাংশ ইটভাটায় কাজ করছে। অথচ আইন বলছে, ১২ বছরের নিচের কোনো শিশুকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না।

নরসিংদীর রায়পুরাসহ এ জেলায় শতাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ইটভাটায় ১২ বছরের কম বয়সী এমন শিশুরা কাজ করছে। এসব শিশু ইট তৈরি ও ইট টানার কাজ করে থাকে। প্রত্যেক শিশু ২০ কেজি ওজনের সমান ছয়খানা কাঁচা ইট মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।

নরসিংদী জেলার ইট ভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার সাহ বলেন, এই জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রায় ৩০-৪০টির বেশি ইটের ভাটা আছে। ভাটায় শ্রমিক সংকটের কারণে কিছু কিছু ইটভাটাগুলোতে শিশুরা কাজ করছে। কিন্তু‘আমরা কারখানার মালিকদের বলে দিয়েছি, শিশুদের ইটের কারখানায় কাজ করতে দেবেন না। কিন্তু‘আমাদের কথা কেউ শোনে না।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে শিশুরা ইটের কারখানায় কাজ করে, তাদের অধিকাংশই এসেছে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর থেকে। এই শিশু শ্রমিকদের অভিভাবকদের অনেককে ভাটার মালিকেরা দাদন দিয়েছেন। শিশুদের বাবা-মা কারখানার মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছেন। এই টাকা নেওয়ার কারণে ইটের কারখানায় কাজ করতে বাধ্য  হচ্ছে এসব শিশুরা।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পুরান্দিয়া এলাকায় জে.বি.সি নামের ইটখোলায় কাজ করছে প্রায় ১৪ জন শিশু। তাদের একজন আল-আমিন। তার বয়স ১১ বছর। দেড় মাস ধরে এ কারখানায় কাজ করছে। বাড়ি কিশোরগঞ্জের। আল-আমিন বলে, ‘আমি ইটখোলার ইট টানি। প্রতিদিন ৫০ টাকা কামাই করি। ইট টানি ৪০০।’

আল-আমিনের আরেক ভাই কাউছার হাবিব। তার বয়স ৯ বছর। সেও ভাটায় কাজ করে। তারা দুই ভাই মিলে সপ্তাহে কিছু টাকা আয় করে তাদের বাড়িতে পাঠায়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নরসিংদী জেলায় বেশিরভাগ ইটভাটাগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই শিশুরা কাজ করে। ইটভাটার মালিকেরা তাদের কোনো খোঁজ-খবরই রাখেন না। একসঙ্গে ছয়খানা ইট বহন করতে গিয়ে অনেক শিশু দুর্ঘটনায়ও পড়ছে। মাথা থেকে ইট তাদের পায়ে এসে পড়ে। আহত হলে বা অস্থুত হলে তাদের চিকিৎসারও কোনো ব্যাবস্থা নেই।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলতে প্রস্তুন নয় বলে জানান।

এদিকে বিষয়ে সুশীল সমাজ মনে করেন যে, বর্তমানে এই জেলায় অধিকাংশ ইট ভাটাগুলিতে সরকারী নিয়ম-কানুন না মেনে শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। তাই এখনই সরকার এই শিশুশ্রমের বিষয়ে তদারকী করা উচিত। তাহলে কমে আসবে এই শিশুশ্রম।

Bootstrap Image Preview