হতে পারে মিরপুরের মাঠে মাশরাফির এটিই শেষ ওয়ানডে । মাশরাফি নিজের মুখে না বললেই । অনেকের মুখে এখন এই কথা। প্রিয় ম্যাশের খেলা দেখতে তাই গ্যালারিতে ছিলো দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। ম্যাশের শেষ ম্যাচ কি সেটা, ম্যাশই ভালো জানেন। তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করেও সিরিজ জয় করতে পারলো না। এখন তৃতীয় ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।
সিরিজ জয়ের ম্যাচ ছিলো তাই পুঁজিটা আরো একটু বেশি হলে ভালো হতো। কিন্তু কিছুটা ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেটি হয়নি। তবে লড়াই করার মত পুঁজি ছিলো। টাইগারদের দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষ হওয়ার ২ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গত ম্যাচের একাদশ নিয়ে এই ম্যাচেও মাঠে নেমেছিলো ক্যাপ্টেন মাশরাফি। দুপুরের ঝল মলে রোদে টসের লড়াইটা শুরু হলো হার দিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে হলো কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুটা রাঙাতে পারলো না তামিম ও লিটন।থমাসের বলে ডান পায়ে আঘাত পেয়ে যেতে হলো হাসপাতালে।
লিটন যখন হাসপাতালের পথে তখন ব্যাটিংয়ে আসেন ইমরুল কায়েস। এক ওভারও যেতে দিলেন না। সেই থমাসের বলে বোল্ড শূন্য রানে বোল্ড আউট হন। শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। তখন ১৪ রান যোগ হয়ে রানের খাতায়। এমন সময় ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন তামিম ও মুশফিক। কঠিন চাপ কাটিয়ে এই দুই ব্যাটসম্যান খেলায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। তাদের জুটি থেকে আসে ১১১ রান। টাইগারদের ইনিংসে এটিই ছিলো সব থেকে বড় জুটি।
এরপর তামিম ও মুশফিক ফিফটি করেন। তাদের ফিফটিতে বুঝা যাচ্ছিলো বড় পুঁজি করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি নিমেষেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। ফিফটি করে বড় শর্ট খেলতে গিয়ে বিষুর বলে রোচের হাতে ক্যাচ আউট হন তামিম। ভেঙে যায় লম্বা রানের এই জুটি। এরপর মুশফিক কিছুটা রানের আশা জাগালেও তিনিও ব্যর্থ হন। ৬২ রান করে থমাসের বলে তিনিও ক্যাচ আউট হন।
থেমে যায় টাইগারদের রানের চাকা। ম্যাচের দায় ভার এসে পড়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর উপর। দায়িত্ব মাথায় নিয়ে ঠিক ঠাক ব্যাটিংও করতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তাদের জুটি থেকে আসে ৬১ রান। এরপর মাহমুদউল্লাহ ৩০ রান করে আউট হলে ভেঙে যায় সেই জুটি।
একা হয়ে যান সাকিব এরপর তাঁর সাথে আর কেউ সময় দিতে পারেননি। উইকেট হারানোর পরেও ব্যাট চালাতে থাকেন সাকিব। চার -ছক্কার ঝড়ে করেন ৬৫ রান। একমাত্র তাঁর ব্যাট থেকে দলের সর্বোচ্চ রান আসে ৬৫। এরপর আর কেউ তেমন কিছু করতে পারেনি। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে টাইগারদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৫৫ রান।
২৫৫ রানের পুঁজিটা খুব অল্প হয়ে গিয়ে ছিলো তাই বোলিংটা দুর্দান্ত করা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। তাই শুরুতেই ফর্মে থাকা মিরাজকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাশরাফি। ওভারের শুরুতে বোলিংয়ে এসে নিরাস করেননি মিরাজ। হেমরাজকে দ্বিতীয় ওভারে এলবিডব্লিউ আউট করে শুরুটা দুর্দান্ত করেন।
প্রথম উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। হোপ ও ব্রাভোর ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। উইকেট খরায় যখন টাইগাররা ভুগছিলেন তখন একটু স্বস্তির বৃষ্টির মত ব্রাভোকে বোল্ড আউট করেন রুবেল। ভেঙে যায় তাদের জুটি থেকে আসে ৬৫ রান।
এরপর আবারো ব্যাটিংয়ে নতুন করে জুটি গড়েন স্যামুয়েলস ও হোপ তাদের জুটি থেকে আসে ৬২ রান। ক্যারিবিয়ানদের এই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মিরপুরের গ্যালারি তখন ঠান্ড। এমন সময় আবারো উইকেট নিয়ে মাঠ গরম করে দেন রুবেল হোসেন স্যামুয়েলস ক্যাচ আউটের ফাঁদে ফেলিয়ে খেলার উত্তেজনা বাড়িয়ে দেন।
রুবেলের উইকেটের পর খেলায় যেন প্রাণ ফিরে পায় টাইগাররা। বল হাতে চালাতে থাকেন একের পর এক আক্রমন । উইকেটে নামা নবাগত পাওয়েলকে ক্যাচ আউট করিয়ে ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামিয়ে দেন মাশরাফি। এরপর হোপের ব্যাটিংয়ের তাণ্ডবে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।
টাইগারদের সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ তামিম(৫০), লিটন (৮) , ইমরুল(০), মুশফিক(৬২) , সাকিব(৬৫), সৌম্য(৬), মাশরাফি(৬), মিরাজ(৯)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ হেমরাজ (৩০), ব্রাভো(২৭), স্যামুয়েলস(২৬), হেটমায়ার(১৪), পাওয়েল(১),চেস(৯), হোপ অপরাজিত (১৪৬)।
মাশরাফি একাদশঃ তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন ও মাশরাফি বিন মর্তুজা(অধিনায়ক)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশঃচন্দরপল হেমরাজ, শাই হোপ, ড্যারেন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমায়ার, রস্টন চেজ, রোভম্যান পাওয়েল, দেব্রেন্দ্র বিশু, কেমু পল, কেমার রোচ ও ওশানে থমাস।