বান্দরবানের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ক্যান্ট.পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ৪ ছাত্রকে নির্যাতন করেছে একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা।
গতকাল সোমবার গভীর রাতে ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত ছাত্ররা হলো- সাইদুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবান।
জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় ক্যান্টিনে নাস্তা করতে যাওয়ার সময় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাইদুল ইসলাম ইফতি মোবাইল ফোন হোস্টেল ডেক্স এ জমা দিয়ে নাস্তা করতে যায়। পরে নাস্তা করে আসার সময় ডেক্স এ মোবাইল না পেয়ে তাদের আগে হোস্টেলে প্রবেশ করা সাইফুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবানকে মোবাইল ফোনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তারা মোবাইল ফোনের বিষয়ে কিছু জানে না এবং হোস্টেলের সিসি ক্যামেরা দেখে মোবাইল ফোন কে বা কারা নিয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য বলে।
কিন্তু তাতে তারা সন্তুষ্ট না হয়ে তাদেরকে সন্দেহ করে এবং ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার গভীর রাতে তামীম এর নেতৃত্বে জিসফাকুল হায়দার, সাইদুল ইসলাম ইফতি এবং আকিল রাত ১২টার পর ৪০৪নং কক্ষে প্রবেশ করে সাইদুল হাসান বিপু, অন্তর ধর, বায়েজিদ, মেহেদী হাসান হৃদয়, সাদনান রাজিম ইবানকে গোল করে ফ্লোরে বসিয়ে বেল্ট ও রশি দিয়ে বেদম প্রহার করে।
এসময় ছাত্ররা যাতে চিৎকার করতে না পারে তাদের মুখে কাপড় গুজে দেয়া হয়। রাত ১২ থেকে ৩টা পর্যন্ত তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং মারধর শেষে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়া হয়। পরে সাইদুল হাসান বিপু ঘটনার বিষয়ে তার পরিবারকে জানালে পরিবারের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে জানানো হয়।
পরে অধ্যক্ষ অভিযুক্ত ৩ জনকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়। তবে এ ঘটনার পর থেকে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হোস্টেলে তাদের ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে থাকবে কিনা সে ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন।
স্কুলটির হোস্টেল সুপার আশরাফ কবির বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং অভিযুক্ত ছাত্রদের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে দিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখব।
নির্যাতিত ছাত্র সাইফুল হাসান বিপুর অভিভাবক রিফাত আলাউদ্দিন জানান, আমরা ছেলে-মেয়েদের হোস্টেলে দিয়েছি তারা যাতে সেখানে নিরাপদে থেকে পড়াশুনা করতে পারে। কিন্তু এ ঘটনার পর আমরা খুবই শঙ্কিত। ছেলে-মেয়েরা সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবে কিনা। এভাবে ছাত্রদেরকে বর্বরভাবে কোন ছাত্র নির্যাতন করতে পারে না। এটা একটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এদের শুধু হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া নয়, এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে তারা এ ধরনের ঘটনা করতে সাহস না পায়। কর্তৃপক্ষ যদি দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ল্যা.কর্ণেল রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। ছাত্ররা একজন আরেকজনকে প্রহার করা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি ঐ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে তাদেরকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কলেজ হোস্টেলে মোবাইল ব্যবহার করা নিষেধ থাকলেও দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র গোপনে হোস্টেলে মোবাইল ব্যবহার করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। মূলত মোবাইলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সংগঠিত হয়।