Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

অযত্ন আর অবহেলায় কমলগঞ্জের বেশিরভাগ বধ্যভূমি

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৮ PM
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর এলাকায় নিরীহ সাধারণ মানুষসহ অনেক মুক্তিযুদ্ধা প্রাণ হারান। দেশমাতাকে স্বাধীন করতে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে পাকবাহিনীর সাথে সমরযোদ্ধ শুরু করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। অথচ দেশের জন্য শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।

প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধা বিরাজ সেন তরুণ বিডিমর্নিংকে জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর এলাকার লোকজন পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অব্যাহত মিছিল ও সভা করতে থাকেন। এ খবরটি স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতা আরিফ মুন্সী ও তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌঁছে যায়। এই পাকবাহিনীর হাতে তৎসময়ে ২৭ মার্চ শমশেরনগরের ৮০ বছর বয়সী স্বনামধন্য জাদুশিল্পী সিরাজুল ইসলাম নিহত হন। আর তাতেই শমশেরনগরের লোকজন মারমুখী হয়ে ওঠেন।

২৮ মার্চই প্রথম শমশেরনগরে পরিকল্পিতভাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ হানাদার বাহিনীর নয় সদস্যকে হত্যা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর থেকেই পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় ডাকবাংলোয় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে।এলাকার স্থানীয় অনেক নিরীহ সাধারণ লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতনের পর শমশেরনগর বিমানবন্দরের রানওয়ের উত্তর-পশ্চিম কোণের বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। তা ছাড়া টানা নয় মাস শমশেরনগরের কয়েকটি স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনাসামনি যুদ্ধ হয়েছিল। এতে হানাদার বাহিনীর অনেক সদস্যও নিহত হয়।

সরেজমিনে শমশেরনগর বধ্যভূমিগুলো ঘুরে দেখা যায়, বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে তালা ঝুলে আছে। সমস্ত স্মৃতিসৌধ এলাকা ঝোপঝাড়ে ভরা। সামনে বাঁশঝাড়ের আগাছা তৈরি হয়ে বন্ধ হয়ে আছে প্রবেশ পথ। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেছিলেন। এই স্মৃতিসৌদের পাশেই ২০১২-১৩ অর্থবছরে নির্মিত হয়েছে শমশেরনগর সম্মুখসমরে শহীদ হওয়া মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিসৌধ ও সম্মুখসমর যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযুদ্ধাদের স্মরণে তৈরী স্মৃতিস্তম্ভ দুটিই নির্মাণ করেছিলেন গণপূর্ত বিভাগ।

মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের কমলপুর সাবসেক্টরের সাব-কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) সাজ্জাদুর রহমান বিডিমর্নিংকে বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শমশেরনগর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও সম্মুখসমরের স্মৃতিস্তম্ভ দুটিই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, শমশেরনগর বাজার থেকে কিছু দূরে ও নির্জন স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হওয়ায় এখানে দায়িত্বের অবহেলা হচ্ছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেকুল হক বিডিমর্নিংকে বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই বধ্যভূমিগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া শহীদদের এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা করব। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি তাদের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানগুলো এই অবস্থায় দেখে আমি নিজেও মর্মাহত হয়েছি। আমি এই উপজেলায় যোগদান করেছি বেশ দিন হয়নি। তবে যোগদানের পর পরই আমি বধ্যভূমিগুলো দেখতে গিয়েছি এবং মর্মাহত হয়েছি। তবে একসপ্তাহের মধ্যেই বধ্যভূমিগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ যাবতীয় কাজগুলো শেষ করা হবে।

Bootstrap Image Preview