বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে গত ৩ দিনের ব্যবধানে অস্ত্রসহ ৪ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একের পর এক সন্ত্রাসী গ্রেফতারের ঘটনায় নগরবাসীর মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অপরদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নগরে বেড়ে গেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রসীদের আনাগোনা।
শনিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নগরের সদরঘাট থানাধীন আইস ফ্যাক্টরি রোডে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ মো. সুমন প্রকাশ বেলাল প্রকাশ কালু (২৪) নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে সদরঘাট থানা পুলিশ। মো. সুমন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকার আবদুল মোতালেবের ছেলে বলে জানিয়েছে পু্লিশ।
সদরঘাট থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মো. সুমন প্রকাশ বেলাল প্রকাশ কালুকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। সুমন একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।
এর আগে শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর সিআরবি কাঠের বাংলো এলাকা থেকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজসহ মো. ফারুক ওরফে বুলেট ফারুক (৩৫) নামে অপর এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফারুকের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতাসহ অন্তত পাঁচটি মামলা আছে নগরীর বিভিন্ন থানায়।
ফারুক ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর টাইগার পাসের আমবাগানে চট্টগ্রামের ডিআইজি বাংলোর কনস্টেবল আব্দুল কাইয়ূম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজসহ ফারুককে গ্রেফতার করে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ফারুক এর আগে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। কোতোয়ালী থানায় ফারুকের বিরুদ্ধ অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানাধীন বালুরমাঠ এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয় সাদ্দাম হোসেনকে (২৮) নামে পুলিশের তালিকাভুক্ত এক সন্ত্রাসীকে। সাদ্দাম বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকার শাহ আলম প্রকাশ আবদুস সাত্তারের ছেলে ও ওই এলাকার আরেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ভোলাইয়ার ভাগিনা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মো. ইলিয়াছ খান জানান, সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, সাদ্দাম বাকলিয়া এলাকার পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিল পুলিশ।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়কের ফিসারিঘাট এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ আব্দুর রহমান প্রকাশ আব্দুর রব প্রকাশ সজল দাশ (৩৬) নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে, নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সজল দাশ জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া বড়ুয়ার টেক এলাকার গোপাল কৃষ্ণ দত্ত রায়ের ছেলে বলে জানা গেছে। সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আব্দুর রহমান প্রকাশ আবদুর রব নাম ধারণ করেন বলে পুলিশ জানায়।
গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরীতে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতির সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে একটি এলজি ও এক রাউন্ড গুলিসহ ওই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।
একইদিন সকালে নগরের খুলশী থানার কুমুসবাগ আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মাসুদ কামাল ওরফে 'কিলার মাসুদ'কে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার মাসুদ কামাল বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার নাচনাপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। তিনি খুলশী থানার ডেবার পাড় কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় থাকেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, মাসুদ কামালের কাছ থেকে দুইটি এলজি, পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ ও ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাসুদ কামাল খুলশী থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। মাসুদ কামালের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা পুলক বিশ্বাসকে ব্রাশফায়ারে হত্যা, ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা কায়সার হত্যার অভিযোগ রয়েছে।