Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস আজ

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার সদর প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:০১ PM
আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:০১ PM

bdmorning Image Preview


আজ ৮ ডিসেম্বর, মৌলভীবাজার শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মৌলভীবাজারের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে টিকতে না পেরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। পরে শহরে মহকুমার মুনসেফ ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় মৌলভীবাজার।

ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকলে ডিসেম্বরের ২ তারিখ রাতে মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর ঘাটি ও চাতলাপুর বিওপিতে হানাদারদের ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথভাবে আক্রমণ শুরু করে। তীব্র আক্রমণের মুখে শত্রুসেনারা টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে তাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে ফিরে যায়। পাক হানাদারবাহিনীকে হটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজারকে শত্রুমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন।

দিনটি স্মরণে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুর রহমান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, এই এলাকায় জেড ফোর্সের সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আক্রমণ আরও তীব্র করে। ৪ ডিসেম্বর জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। ৫ ডিসেম্বর জেলার সর্বত্র শুরু হয় তীব্র আক্রমণ। জেলার চারদিক দিকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে একের পর এক এলাকা শত্রুমুক্ত হতে থাকে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর দুই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও মুন্সীবাজার এলাকামুক্ত করে  মৌলভীবাজার শহর অভিমুখে আসার জন্য অভিযান শুরু করেন। ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী শহর ঘেরাও করে। এখানে মহকুমা হেড কোয়ার্টার থাকার কারণে পাকবাহিনীর বিগ্রেড হেড কোয়ার্টার ছিল। জেড ফোর্সের ১৭টি ইউনিটের মধ্যে ২টি ইউনিট কুলাউড়ার দিকে গেলেও বাকি ১৫ টি ইউনিট নিয়ে তারা মৌলভীবাজার শহরে ঢুকার চেষ্টা শুরু করেন।

মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশে ৪ ডিসেম্বর বিকেলে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে এসে জড়ো হয়। সেখানে বড়টিলা এলাকায় পাকিস্তানিদের সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রায় ১২৮ জন সেনা শহীদ হন। ৫ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর পিছু হটার ফলে ৮ ডিসেম্বর পুরো মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চাতলাপুর বিওপি, আলীনগর বিওপি ও টিলাবাড়ী কালিপুর থেকে ২ ব্যাটারি আর্টিলারী গান দিয়ে চাতলাপুর আলীনগর সরাসরি ও অন্যদিকে কমলপুর থেকে ধলই কুরমা যৌথভাবে আক্রমণ করে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

জেলা পরিষদ প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, জেলায় অনেক গণহত্যার গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে যা এখনো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করার স্বার্থে বধ্যভূমি, গণহত্যার স্থানগুলো সংরক্ষণ করে শহীদদের নাম-স্মৃতিফলক করা প্রয়োজন। 

Bootstrap Image Preview