Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বাংলাদেশে প্রতিদিনই আমাকে ধর্ষণ করা হতো’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩০ PM
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রুবি মেরির জন্ম হয়েছিল ব্রিটেনের সাউথ ওয়েলসে। যেখানে তার চমৎকার শৈশব কেটেছে। কিন্তু সবকিছুই বদলে গেল যখন সে সাবালিকা হয়। যখন তার বয়স ১৫ বছর, তখন ১৯৯৮ সালের একদিন ছুটি কাটানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসলেন তার বাবা-মা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার কাছে রুবি মেরি বলেন, ‘মাত্র ছয় সপ্তাহ আমাদের বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে গেল দুইমাস। এরপরে তিনমাস, তারপরে ছয়মাস। আমরা সবাই বাড়ি আসার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি বাড়ি যেতে চাই, স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। তিনি বলতেন, আমরা অনেক টাকা খরচ করে এখানে এসেছি...এইসব। কিন্তু সেটি ছিল অজুহাত, কারণ তখন তিনি আসলে আমার বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন।''

২০১৪ সাল থেকে 'ফোর্সড ম্যারেজ' বা জোর করে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ব্রিটেনে ‘অপরাধ’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এরপর ওয়েলসে এ ধরনের মাত্র একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে চারটি ঘটনায় শাস্তি হয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হিসাবে, প্রতি বছর ওয়েলসে অন্তত ১০০টি জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, এই আইনে বাবা-মা কারাগারে যেতে পারে, এ রকম সম্ভাবনা থাকায় হয়তো অনেক ভুক্তভোগী বা ঘটনার শিকার মেয়ে সামনে এগিয়ে আসতে চান না।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৫ বছরের রুবি মেরি বলেন, ‘এটা কঠিন, কারণ সবাই তার পরিবারকে ভালোবাসে...কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেকোনো নির্যাতন আসলে নির্যাতনই।’

জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হওয়ার সেই পরিস্থিতি নিয়ে রুবি মেরি বর্ণনা করছিলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই আমাকে ধর্ষণ করা হতো, যাতে আমার নতুন স্বামী দ্রুত একটি বাচ্চার বাবা হতে পারেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান।’

বেড়ানোর কথা বলে কিশোরী বয়সে রুবি মেরিকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল।  এখনো সেই দিনের কথা মনে আছে রুবি মেরির, যেদিন প্রথম তিনি নিজের বিয়ের কথা জানতে পারেন।

রুবি বলেন, ‘একদিন যখন আমরা পরিবারের সঙ্গে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম, তিনি (বাবা) বাইরে থেকে এসে খাবার টেবিলে বসে খেতে শুরু করলেন। এখনো আমার সেই দিনের কথা মনে আছে, যেন সেটা গতকালের ঘটনা।‘ ওই সময় রুবির বাবা বলেন, ‘এটা কি চমৎকার হবে না, যদি আমরা রুবির বিয়ে দিয়ে দেই?’

রুবি মেরি বলেন, 'আমি খুবই বিব্রত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বয়স তখন খুবই কম, আমার খাবারের প্লেটটি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললাম, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে ছুটে গেলাম। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না, এই খবর আমি কীভাবে নেব-কীভাবে এর সঙ্গে নিজেকে মেলাবো? আমি এরপর যেন একটা দরাদরির পণ্যে পরিণত হলাম। একজন করে আমার চাচারা এসে আমাকে দেখে যেতে লাগলো আর তারা যেন আমার দর করতে লাগলো। এটা ছিল ভয়াবহ একটা ব্যাপার। একজন ক্রীতদাসীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছিল আমার সাথে।' আমি ছিলাম একটা অপরিচিত দেশে, সেখানে কার কাছে যেতে হবে, তা জানতাম না।'

দ্বিগুণ বয়সের একজন ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে মেরির বিয়ে দেওয়া হলো। বিয়ের দিন অনেক মানুষ তাকে দেখতে এসেছিল।

রুবি বলেন, ‘আমাকে পুতুলের মতো সাজানো হলো। সবাই উঁকি মেরে হাসিমুখে নতুন বউ দেখতে এল। শুধুমাত্র বসে বসে আমি ভাবছিলাম, আমি কি একটি বস্তু? তখন যেন যা করতে বলা হচ্ছে, তাই করছি। আমার মাথায় তখন শুধু ছিল ব্রিটেনে ফিরে আসার চিন্তা। ব্রিটেনে আসার জন্য যা কিছু করা দরকার, তাই করা।'

বিয়ের পরেই তার নতুন স্বামী একটি সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। রুবি বলেন, 'কম বা বেশি, প্রায় প্রত্যেক রাতেই আমাকে ধর্ষণ করা শুরু হলো, আমি যাতে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হতে পারি, যাতে তার (স্বামী) ব্রিটেনে আসার একটি পথ তৈরি হয়। এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা।''

রুবি মেরি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য ওয়েলসে ফিরে আসেন। শিশুটির জন্মের পরেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

মেরি বলেন, ‘এটা তাদের জন্য লজ্জাজনক বলে আমার পরিবারের মনে হয়েছে। এরপর অনেক দিনের জন্য আমার পরিবার আমাকে অস্বীকার করে গেছে।’

এখন জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে মানুষজনকে সচেতন করার জন্য একজন দূত হিসাবে কাজ করছেন রুবি মেরি।

Bootstrap Image Preview