Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:২০ PM
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:২০ PM

bdmorning Image Preview


আজ ৭ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ওড়ানো হয় লাল-সবুজ পতাকা। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তিপাগল আপামর জনতা। দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেদিনের সাহসী সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। শত্রুর বুলেটের সব আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা অন্ততঃ ৫০টি যুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। মুক্তিযুদ্ধের খরচাদি বহনের জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারি হতে অস্ত্র আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলঙ্কার টাকা-পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। অষ্টম ও নবম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাক সেনাদের দুই শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হয় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় আরো দুইজন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরা, টাউন শ্রীপুর, বৈকারী, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউজ উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীত সন্ত্রস্ত করে ফেলে পাকসেনাদের। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাকসেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকবাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।

এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে সাতক্ষীরায় আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়।   

এরপর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোাশরফ হোসেন মশু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাতক্ষীরাস্থ উপ-সচিব শাহ আব্দুল সাদী প্রমুখ।

পরে শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের কবর জিয়ারত ও পুস্প মাল্য অর্পন এবং জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বাহী লাঠিখেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়। 

Bootstrap Image Preview