এসএম বাচ্চু, তালা থেকে:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গরু ও ছাগলের ক্ষুরা রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই এই রোগে মারা গেছে ৩০টিরও বেশি গরু ও ছাগল। আক্রান্ত হয়েছে অর্ধ শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে- সরকারিভাবে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না থাকা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা না রাখায় এ রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে।
সরেজমিনে তালা উপজেলার গোপালপুর গ্রামে গেলে কালিপদ বিশ্বাসের স্ত্রী বৃদ্ধা আরতী রানী বিশ্বাস জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার খরচ যোগাড় করে আসছিলেন। তার জার্সি গাভী থেকে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ কেজি করে দুধ পেতেন। ১০ দিন আগে হঠাৎ করে গাভীটির জিহবায় ঘা দেখা দেওয়ায় খাওয়া কমিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে গাভীটির জ্বর হয়। দু’পায়ের খুরে দগদগে ঘা দেখা দিলে গাভীটির চলনশক্তি কমে যায়। উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তার অফিসে যেয়ে বার বার তাগিদ দিয়েও কোন ঔষধ পায়নি। ৫০০ টাকা না দিলে সরকারি ডাক্তার আসে না।
তিনি বলেন, ওই ডাক্তারের সাথে থাকা কর্মচারিরা টাকা ছাড়া কিছ্ইু চেনেন না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ডাক্তারের শরনাপন্ন হলেও শুক্রবার গরুটি মারা যায়। গাভীটির যে বাছুরটি রয়েছে ও তার ছেলে মনিশঙ্কর বিশ্বাসের একটি জার্সি গাভী আক্রান্ত হওয়ায় তাদেরকেও বাচানো কঠিণ হয়ে পড়েছে।
একই গ্রামের লক্ষী রানী দত্ত জানান, এক সময় তাদের গোয়ালে অনেক গরু ছিল। গরুর উপরই ছিল তাদের সংসারা। দু'টি দুগ্ধবতী গাভী ও একটি বাছুর ছিল তাদের গোয়ালে। ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার একটি গাভী মারা গেছে। অন্য গাভী ও বাছুরটির পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
খানপুর ঋষিপাড়ার সুবোল দাস ও মহর্ষি দাসের দু'টি করে গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে তাদের তিনটি গরু। দুধপল্লী খ্যাত জিয়ালা গ্রামের প্রশান্ত ঘোষ জানান ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে তার খামারে ছয়টি গাভী ও দু’টি বাছুর মারা গেছে। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে সাতটি গরু।
একইভাবে তিনটি বাছুর গত এক সপ্তাহে মারা যাওয়ার কথা জানালেন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত দিবস ঘোষ। তাদের পাড়ায় এ নিয়ে কয়েক দিনে কমপক্ষে আরো ১০টি গরু মারা যাওয়া ও ৩০টির বেশি গরু আক্রান্ত হওয়ার কথা জানালেন দিবস ঘোষ।
তালা সদর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ডা. শাহীনুর ইসলাম জানান, খুরা রোগে আক্রান্ত হওয়া কোন গবাদি পশুর মৃত্যুর সম্ভবনাই বেশি। এ রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এফএমডি সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় খামারীরা বাধ্য হয়ে তাদের শরনাপন্ন হয়ে থাকেন। সে অনুযায়ি তারা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে আক্রান্ত হলে খামারীদের পারচর্যার উপর নির্ভর করে পশুটির বাচা ও মরা।
তালা উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে তালায় সবচেয়ে বেশি গাভী পালন হয়। সে কারণে প্রয়োজনের তুলনায় ভ্যাকসিন কম থাকায় খামারীদের কিছুই করার থাকে না। তবে তৌহিদুল ইসলাম পশু চিকিৎসক হিসেবে সম্প্রতি তাদের অফিসে যোগদান করার পর থেকে এলাকায় ক্ষুরা রোগের আক্রমণ কমেছে। বর্তমানে এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচেছ কম। তবে ৫০০ টাকা গ্রহণের বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।