Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

 ৪৭ বছর পর কুড়িয়ে পাওয়া নারী পেল তার পরিবারের সন্ধান

ভোলা প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৫ PM
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


ভোলা বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মতিন সিকদার বাড়ীতে ৪৭ বছর ধরে আশ্রিতা ৭০ বয়োসর্ধো নারী তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে।  গত ২ ডিসেম্বর আশ্রিতা সুনেকা বেগমের পরিবার তাকে খুঁজে পায়। বর্তমানে পরিবার ও আশ্রয় দাতার পরিবারের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। 

আশ্রয় দাতা মোশারফ সিকদারের মেঝো ছেলে বর্তমান মুলাদী থানার ওসি জিয়াউল আহসান সিকদারের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বোরহানউদ্দিন কাচিয়া ইউনিয়নের সিকদারহাটে মানসিক প্রতিবন্ধী এক যুবতী মহিলাকে দেখা গেলে মতিন সিকদার বাড়ির মরহুম মোশারফ সিকদার (আমার পিতা) তাকে বাড়িতে এনে আশ্রয় দেয়। তাকে তার ঠিকানা বলতে বললে সে শুধু মুখে মোহন, ছাত্তার এই কথাগুলো ছাড়া আর কিছুই বলতে পারতো না।  

তখন তাকে স্থানীয় চিকিৎসক দেখালে তারা জানায় সে মানসিক রোগী এবং তার স্মৃতি মুছে গেছে। সেই থেকে মহিলা আমাদের বাসায় আশ্রিতা হিসাবে বসবাস করতে শুরু করে এবং আমাদের পরিবারের সকল সদস্য নিজের পরিবারের অংশ হিসাবে তাকে আদর যত্ন করে আলগে রাখি বর্তমানে ৭০ উর্ধ বয়স এবং বার্ধক্যে শরীর অনেকটা কুজো হয়ে গেছে। আমি চাকুরী সুবাদে বাড়িতে দীর্ঘ ২৮ বছর খুব কমই বাড়িতে আসা পড়ে আসলে আমি তাকে তার বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে শুধু মোহন, ছাত্তার এগুলো ছাড়া আর কিছুই বলতো না এবং আমাদের নিজের সন্তনের মতো মানুষ করছে। আমরাও তাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতাম। এক সময় তার ঠিকানা সন্ধানের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।

২০১৭ সালে শেষের দিকে স্মৃতি কিছুটা ফিরে আসতে শুরু করে এবং মোহন, ছাত্তার এগুলোর পাশাপাশি গয়নাঘাটা, পালদী, আলা মসজিদ, ভাই রাজা এগলো বলতে থাকে কিন্তু থানার নাম বলতে চেষ্টা করে তখন আমরা তার বরিশালে আঞ্চলিক কথাবার্তায় বরিশালে কাছে কোন থানা ধরে নেই। কিন্তু বলতে পারে না, ইদানিং মাস দুয়েক আগে আমার ছোট ভাই নাজমুল সিকদার আমাকে ফোনে জানায় রিজির মা (আমরা তাকে এই নামে ডাকি) গৌরনদীর আলা মসজিদের কাছে তাদের বাড়ি এবং পিতার নাম ইব্রাহীম বলে জানায়।

আমি তখন গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে আলা মসজিদের কাছে ইব্রাহীম মিয়া নামের কোন লোক বসবাস করত কিনা এবং তার কোন মেয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হারিয়ে গেছে কিনা তা জানার জন্য অনুরোধ করলে তিনি গৌরনদীর বর্তমান লিটন কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করলে কাউন্সিলর ঘটনার সত্যতা উদ্ধার করে তাদের পরিবারের লোকজনকে মুলাদি থানায় আমার কাছে পাঠিয়ে দিলে তাদের বর্নিত ঘটনার সাথে ৪৭ বছর আগের ঘটনার মিলে যায় এবং তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া সুনেকা বেগম (পরিবারের নাম) কে ফিরিয়ে নিতে বর্তমানে আমাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে।

এ ব্যাপারে সুনেকা বেগমের মেয়ে জামাই ডাক্তার সামাদ জানান, আমি সুনেকা বেগমের একমাত্র মেয়ের জামাই আমি বিয়ের সময় শুনেছি আমার শাশুরীর গোপালগঞ্জের কোটালি পাড়াতে বিয়ে হয়েছিল এবং শশুরের নাম মোহন। কিন্তু আমার স্ত্রী জন্মের কিছুদিন পর তার মানসিক রোগ হয় এবং আমার নানা শশুর তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসার পথিমধ্যে হারিয়ে গেছে এবং এত বছর পর আমরা ধরে নিয়েছি তিনি মারা গেছেন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমরা তাকে ফিরিয়ে পেয়েছি। বাকি জীবন আমাদের সাথে থাকুক এই জন্য নিতে এসেছি। সাথে ভাজি জামাই জিল্লুর রহমান ও নাতিন জামাই আবু হানিফ খুশির কান্নাতে মোশারফ সিকদারের পরিবারকে কৃতজ্ঞা জানান।

এ সময় তারা বলেন, আপনাদের উছিলায় আমরা হারানো বন্ধন খুঁজে পেয়েছি, আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন আমরা এই ফরিয়াদ করি। আশ্রিতা সুনেকা বেগমকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আমি বাড়ি যাবো; কিন্তু আবার এখানে ফিরে আসবো। 
 

Bootstrap Image Preview