স্কুলে শিক্ষকের কথায় অপমানিত হয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে (১৫)।
ওই ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর গাড়ি অবরোধ করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শ্লোগানের মুখে শিক্ষামন্ত্রী গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি ২০ মিনিট ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনার বিচারের আশ্বাস দেন।
আশ্বাস দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? যে ঘটনাগুলো আমরা শুনছি, এর পেছনের কথা শুনছি; ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, 'এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।'
অরিত্রীর মা-বাবা জানান, তাদের মেয়ের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার চলছিল সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় তার কাছে একটি মোবাইল পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রীর মা-বাবাকে ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী মোবাইলে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রীর সঙ্গে তারা স্কুলে যান। তারা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে যান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করেন। এসময় মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলা হয়
অরিত্রীর বাবা আরো বলেন, এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। প্রিন্সিপালও ভাইস প্রিন্সিপালের মতো আচরণ করেন। সেখানে গিয়ে তারা ক্ষমা চান। তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।
দিলীপ অধিকারী বলেন, এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে তিনি স্ত্রীসহ বাড়ি গিয়ে দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।