পাকিস্তানের তারকা শেফ ফাতিমা আলির বয়স মাত্র ২৯। খুব অল্প বয়স থেকেই তার শখ ছিল শেফ হওয়ার। হয়েও গেলেন।কিন্তু হঠাৎ থমকে গেল সব। ক্যানসারের মতো মরণ রোগ ধরা পড়ল তার শরীরে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন তার হাতে আর সময় রয়েছে মাত্র এক বছর। মরণ এই রোগ থেকে আর মুক্তি নেই তার। আর এই এক বছরের মধ্যে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান তিনি। আর নিতে চান বিশ্বের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর খাবারের স্বাদ।
সিবিএস নিউজ ও আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাতিমা প্রথম কোনো পাকিস্তানি নারী, যিনি পাকিস্তানের রান্নাকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের সামনে। জনপ্রিয় টিভি শোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় সেরা শেফ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সেরা শেফ নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে তার সারকোমা নামে হাড়ের একধরনের ক্যানসার ধরা পড়ে। হাড়ের এই ক্যানসার ধীরে ধীরে সংলগ্ন টিস্যুকে গ্রাস করে। এরপর শুরু হয় ফাতিমার আসল লড়াই।
ফাতিমা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সারা বিশ্বের রান্নার স্বাদ নিতে চান তিনি। ক্যানসার হারাতে পারবে না তাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যানসার ধরা পড়ার আগেই নিউ ইয়র্কের ‘ইনস্টিটিউট অব কালিনারি এডুকেশন’ থেকে পড়েছেন পাকিস্তানের এই তরুণী। একটি ‘আপস্কেল রেস্টুরেন্টেও’ কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন টিভি শো’তেও অংশ নিয়েছেন।
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও ফাতিমা রান্না চালিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত
ফাতিমার পছন্দ বিভিন্ন ধরনের কন্টিনেন্টাল কুইজিন তৈরি করা। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও তিনি সেই কাজ করে যাচ্ছেন। চিকিৎসার মাঝেই ক্যানসারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে রান্নার কাজ।
এদিকে অস্ত্রোপচারের পর ফাতিমার ছবি দেখে অনেকেই চমকে যান। কিন্তু ফাতিমা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। ফাতিমা বলেন, ‘যেভাবে হোক হাতগুলো সচল রাখতে হবে তার।’
চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন ফাতিমার হাতে আর সময় রয়েছে এক বছর। ছবি: সংগৃহীত
এরপর শুরু হয় কেমোথেরাপি। মাসের পর মাস চলে এই থেরাপি। অবশেষে গত জুলাই মাসে তাকে ‘ক্যানসারমুক্ত’ বলে ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অক্টোবর মাসে আবারও ফিরে আসে এই মরণব্যাধি ক্যানসার। এবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার হাতে আর মাত্র এক বছর সময় রয়েছে। মানে এক বছরের বেশি বাঁচবেন না তিনি। আর এই এক বছরের মধ্যে ফাতিমা সারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় টক শো দ্য এলেন ডিজেনারেসে আমন্ত্রণ জানানো হয় ফাতিমাকে। সেই অনুষ্ঠানে তাকে ৫০ হাজার ডলার উপহার দেওয়া হয়। কারণ তিনি যেন সারা পৃথিবীর সেরা রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। শিখতে চান সেই সব রান্নাও।
এত অসুস্থাতার পরও ফাতিমা বিভিন্ন রান্না করে সেই সব রান্নার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন প্রায়ই।