Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইভিএমে ভোট নিয়ে যা বলছেন চট্টগ্রামের ভোটাররা

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ PM
আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়া নিয়ে চট্টগ্রামের ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ প্রযুক্তির সহায়তায় ভোট দেয়া নিয়ে নবীন ভোটারদের মাঝে উৎফুল্ল মনোভাব দেখা দিলে ও অধিকাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ এবং কম শিক্ষিত ভোটার ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম নগরের নাভি খ্যাত সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আসন হচ্ছে চট্টগ্রাম-৯। শহরের মুল ভূ-খন্ড কোতোয়ালী, পাচঁলাইশ, চকবাজার,ও বাকলিয়া থানার মধ্যে এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম ৯ সংসদীয় আসনটি গঠিত।

চট্টগ্রামে একটি কথা চালু আছে, ‘কোতোয়ালি আসন যারা জেতে, তারাই সরকার গঠন করে’। এখনও এর স্বাভাবিক পুনরাবৃত্তি চলছে। এবার এই আসনে ১৪৪টি ভোট কেন্দ্রে মোট দুই লাখ ৩৯ হাজার ৯১৪ জন ভোটার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট দেবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩০ হাজার ১৪৭ এবং নারী ভোটার এক লাখ নয় হাজার ৭৬৭ জন।

১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ দফা নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমান দু’বার বিজয়ী হয়েছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হন বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নান (প্রয়াত)। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন নুরুল ইসলাম বিএসসি।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু এমপি নির্বাচিত হন।

নগরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষিকা ও বাগমনিরাম ওর্য়াডের বাসিন্দা আয়েশা বেগম বলেন, ‘এর আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম, তবে সেটা ব্যালটে। এবার আমাদের (কোতোয়ালী) আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। দেশ ডিজিটাল হয়েছে তাই ভোটের পদ্ধতিও ডিজিটাল হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছি ৩০ ডিসেম্বরের জন্য।’

তবে অধিকাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটাররা ইভিএম নিয়ে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট নেয়ার আগে যথেষ্ট প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের দাবি করেছেন তারা।

নগরের ব্যাটারী গলির বাসিন্দা জননী লন্ড্রীর স্বত্বাধিকারী বাবু সম্ভুদাশ বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে নগরবাসী পুরোপুরি অন্ধকারে। পত্রিকা থেকে জেনেছি জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড ছাড়াও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন? এই অবস্থায় ভোট যে শতকরা শতভাগ নির্ভেজাল থাকবে, তার নিশ্চয়তা কী ?’

নগরের নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক দিদারুল আলম বলেন বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

‘একজন ভোটার ব্যালটে সিল মারার পর নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন ভোটটি তার পছন্দের প্রার্থীই পাচ্ছেন। কিন্তু প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিয়ে একজন ভোটারের মনে প্রথম প্রশ্ন হবে,তার প্রার্থী ভোটটি পাচ্ছেন তো ? ঠিকঠাক মতো পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার পরেও ভোটটা গেল কই সেটা বুঝতে না পারার কারণে তার মনে সন্দেহ কাজ করবে।’

লাভলেইন এলাকার নারী ভোটার হাকিমা বেগম বলেন, ‘কাগজের ভোট দিতে গিয়েও আমাদের নানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তি হতো। ইভিএমে প্রথম প্রথম ভুল হবে সেটা নিশ্চিত। এরপরেও আমি ইভিএমে ভোট গ্রহণের পক্ষে। কারণ একটা না একটা সময় এই পদ্ধতিতে আমাদের যেতেই হবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৯ আসনে ভোটার হলেও তিনি এখন থাকেন নগরের চাঁদগাও আবাসিক এলাকায়। তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক ভোটার আছে যারা কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনের ভোটার হলেও গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন করণে নগরের বিভিন্ন স্থানে বা গ্রামে থাকছেন। তাই ভোটারদের ইভিএম বিষয়ে ধারণা দিতে নির্দিষ্ট আসনের পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।’

এদিকে চট্টগ্রামের এই আসনে ইভিএমে ভোটের কথা বলা হলেও নগর বিএনপির নেতারা এ সীদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে যে ইভিএম ব্যবহার করেছে তাতেও কোনো জায়গায় ইভিএম কখনও কখনও বন্ধ হয়ে গেছে। একজনের ভোট আরেকজন দিয়েছে। কোথাও ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট পেপারেও ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়েছে। এ ছাড়া ইভিএমে সহজেই কারসাজি করা যায়। প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারা চাইলে নিজের বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে ভোটার ছাড়াও ইভিএমকে ভোটদানের উপযোগী করতে পারে। ফলে অসাধু প্রিজাইডিং/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে সহজেই ভোট কাস্ট করা সম্ভব। তবে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট দেয়ার পক্ষে।

১৫ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বলেন বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। ভারতেও বেশ কয়েকটি নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে ইভিএম ব্যবহৃত হচ্ছে।’

ইভিএমে ভোট দেবেন যেভাবে : এই পদ্ধতিতে প্রথমে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করেন পোলিং অফিসার। ডাটাবেজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে দীর্ঘদিন আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহারে বরাবরই অনড় ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে গত মাসে বিভাগীয় শহরগুলোতে ইভিএম মেলারও আয়োজন করে ইসি।

অবশেষে গত সোমবার সারাদেশের শহরাঞ্চলের ৪৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ৬ আসনে ইভিএমের ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত হয়। ছয় আসনের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী)। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

Bootstrap Image Preview