শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। মানছেনা কোন সরকারি নীতিমালা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যেই নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাসা-বাড়িতে এমনকি বাণিজ্যিক ভবন ভাড়ায় নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এ রমরমা বাণিজ্য।
অভিযোগ রয়েছে স্কুল-কলেজে ক্লাসে সময় দেওয়ার চেয়ে বাসায় ও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে কোচিংয়ে ব্যাচ পড়ানো এসব শিক্ষকের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নামকাওয়াস্তে ক্লাসে উপস্থিত হয় এসব শিক্ষকরা। এসব শিক্ষকরা আন্তরিকতার সহিত ক্লাসে পাঠদান করান না। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বনামধন্য এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। জনপ্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছেন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে সচেতন অভিভাবকদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
কলেজ এমনকি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করানোরও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে গাইড বইয়ের ভিড়ে হারাতে বসেছে মূল বই। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে আগ্রহ কমে গেছে শিক্ষার্থীদের। তাদের চাপিয়ে দেওয়া এসব অবৈধ নোট ও গাইড বই মুখস্থ করতেই ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। নেই কোনো পদক্ষেপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর কয়েকজন শিক্ষক স্কুল ছুটির পর পরই বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমকেই ব্যবহার করছেন কোচিং সেন্টার হিসেবে। নিজ বিদ্যালয়েই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাছাড়াও দেববাড়ি রোডের সেন্ট মার্থাস স্কুল, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ রোডের পল হ্যারিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ভিক্টরিয়া উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষকেই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে কোচিং সেন্টার হিসেবে।
যা পরিচালিত হচ্ছে এই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারাই। স্বনামধন্য এই সব বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বাসায় ব্যাচ করেও চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য।
জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এমন বাণিজ্যে হতবাক অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের ফেল করে দেওয়ার ভয়ে মুখ খোলে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ কুমার বর্ধন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের নাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমি তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তালুকদার জানান, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবেন না।