চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার সন্দেহপ্রবণ এক স্বামী তার স্ত্রী, কন্যা ও শিশুপুত্রকে সাবল দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেছে। আহতদের মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে মেয়ে নূপূরকে (১২) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও স্ত্রী মূর্শীদা খাতুন (৩৮) ও শিশুপুত্র হুজাইফাকে (৬) রাজশাহীতে রেফার করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই খুনে স্বামী মিলন (৪৫) পালিয়ে যাওয়ার সময় হোগলডাঙ্গা মাঠের মধ্য থেকে তাড়িয়ে ধরে খাঁচায় বন্দি করেছে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের গোবিন্দহুদা ক্লাবপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার আরামডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে মূর্শীদা খাতুনের সাথে একই উপজেলার গোবিন্দহুদা ক্লাবপাড়ার বাবু শাহার আলীর ছেলে মিলনের সাথে প্রায় ২০ বছর আগে বিয়ে হয়। ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক মিলন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। বড় ছেলে জিহাদ এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট ছেলে হুজাইফা (৬) স্থানীয় ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শেণিতে এবং একমাত্র মেয়ে নুপূর (১২) চিৎলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়ণরত।
বিয়ের পর থেকে দু ছেলে ও ১ ময়েকে নিয়ে তাদের সংসার বেশ আনন্দেই কাটছিল। বেশকিছু দিন ধরে স্বামী মিলন তার স্ত্রীর উপর সন্দেহ প্রবণ হয়ে ওঠে। কথায় কথায় স্ত্রীকে মারধর শুরু করে। বাড়ির উঠান দিয়ে যে পুরুষই যাক না কেন সে চাচা শমুরই হোক আর ভাসুরই হোক স্বামী মিলন তার স্ত্রী মূর্শীদাকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করার পর এলোপাতাড়ি মারধর করে আসছিল।
এভাবে প্রায় বছর দুয়েক পেরুনোর পর এক সপ্তাহ আগে স্বামী মিলন তার স্ত্রীকে বেধড়ক মারপিট করে পিতার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়। গত পরশু মিলন তার স্ত্রীকে পিতার বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে মিলন তার বড় ছেলে জিহাদকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে বলে। জিহাদ মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে ঘুরেতে বেরুনোর পরপরই মিলন তার স্ত্রী মূর্শীদাকে পেরেক তোলা সাবল (ডাইস) দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
সাবলের আঘাতে গৃহবধু মূর্শীদার মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়। মাকে রক্ষা করতে মেয়ে নূপুর এগিয়ে এলে তাকেও সাবল দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। এ সময় শিশুপুত্র হুজাইফা চিৎকার দিয়ে কাঁন্নাকাটি শুরু করলে পিতা মিলন তার শিশুপুত্রকেও মারতে ছুটে আসে। এ সময় শিশুপুত্র হুজাইফা দৌড়ে পালিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসলে খুনে-পাষন্ড পিতা মিলন তাকে তাড়িয়ে ধরে হাতে থাকা সাবল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় শিশু পুত্র হুজাইফা সাবলের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর খুনে মিলন মাঠ দিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই প্রতিবেশীরা ছুটে আসে এবং রক্তাক্ত জখম স্ত্রী, মেয়ে ও শিশুপুত্রকে মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরে গৃহবধু মূর্শীদা ও শিশুপুত্র হুজাইফার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে পাষন্ড মিলনকে হোগলডাঙ্গা মাঠের মধ্য থেকে তাড়িয়ে ধরে থানা হাজতে নেয়।
দামুড়হুদায় মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস জানান, মিলনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্ত্রীকে সন্দেহ করে এবং বেশ কিছুদিন ধরে তার মাথায় সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে। আহত মা ও শিশুপুত্র মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
এ দিকে মিলনের পিতা বাবু শাহার আলী বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে তার ছেলের মাথায় ছিট (ব্রেন নষ্ট) হয়েছে। ঘটনার পর থেকে খুনে মিলনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী তুলেছে এলাকাবাসি।