Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রানীশংকৈলে মাইকের উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৯ PM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৯ PM

bdmorning Image Preview


খুরশিদ আলম, রানীশংকৈল প্রতিনিধিঃ

একটি সু-সংবাদ একটি সু-সংবাদ একটি সু-সংবাদ। আগামীকাল সকালে পৌরশহরের চাদঁনী সিনেমা হলের সামনে বাবুলের মাংসের দোকানে বিশাল ষাড় গরু জবাই করা হবে। বিশাল ষাড় গরু জবাই করা হবে। ষাড় গরুটির মূল্য ৬০ হাজার টাকা। আগে আসলে আগে পাবেন। এভাবেই সু-সংবাদ আসে আর বিরক্ত হয় জনসাধারণ।

কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়ত এমনিভাবে উচ্চ শব্দে মাইকে এমন সব প্রচারণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল পৌর শহরের মানুষ।

শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শহরে সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রতিদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে সিনেমা, সভা-সমিতি, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি, ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসকের সেবা, মলম-মাজন বিক্রি, গরু-ছাগল হারানোসহ নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস, ব্যাংক-বিমার দাপ্তরিক কাজ ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

পৌরশহরের ভান্ডারা গ্রামের পিইসি পরীক্ষার্থী আফরোজা খাতুন ক্ষোভ করে বলে, পরীক্ষা চলছে এমনিতেই আমরা ছোট মানুষ পড়ার অনেক চাপ তারপরও রাত বেরাতে বিভিন্ন ধরনের মাইকিং বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথায় চরম আঘাত আনে। অসহ্য হয়ে যায়।
একইভাবে মহলবাড়ী গ্রামের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থী ফারুক বলেন,কিছুদিন আগে রাতে একটি অংক মেলাতে পারছিলাম না খুব টেনশন সে-সময় মাইকে বেজে উঠলো এখন থেকে চাদনী সিনেমা হলের সামনে নিয়মতি গরুর মাংস পাওয়া যাবে তারই সুখবর। এতটাই বিরুক্ত লাগছিলো যা বুঝাতে পারবো না।

পৌর শহরের বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী মাসুম জানান, যখন তখন মাইকিং হওয়ায় আমরা অনেক সমস্যায় আছি। ক্রেতাদের কথা অনেক সময় একাধিকবার শুনতে হয়। উচ্চ শব্দের মাইকিংয়ে আমাদের কানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ নীরব আবাসিক মিশ্র বাণিজ্যিক ও শিল্প  পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে (ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা) ৫০ ডেসিবল ও রাতে (রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা) ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে মাইক, এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধানও আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এর ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয়ত হবেন। তবে আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।

তবে শহরবাসীর অভিযোগ, শহরে মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে এ বিধান মানা হয় না। বিধান মানা না হলেও প্রশাসন আইনের প্রয়োগ করে না।

পৌরশহরের শিবদিঘী যাত্রী ছাউনি মোড়ে গতকাল বুধবার উচ্ শব্দে মাইক বাজিয়ে এনার্জি সেভার বৈদ্যুতিক বাল্ব বিক্রি করছিলেন আব্দুস সালাম (২৫) এতে তিনি বাল্বের বিভিন্ন গুনাগুন সর্ম্পকে মাইকে বলছিলেন।

এ সময় তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, মাইকেও আওয়াজ শুনলে পাবলিক জড়ো হবে তাছাড়াও ভিড়ের মধ্যে আমাদের কথাগুলো ক্রেতাদের কানে পৌছানোর জন্যই মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।

একইভাবে জেলা শহর ঠাকুরগাও থেকে অটোচার্জার গাড়ীতে এনার্জি সেভিং বাল্ব গতকাল বুধবার হাটের দিন হওয়ায় বন্দর কলেজ বাসষ্ট্যান্ডে বিক্রয় করতে এসেছেন রাজিব। এতে তিনি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ১শ' টাকা মূল্যের বাল্বের সাথে একটি আর্কষনীয় মগ ফ্রি বলে মাইকে প্রচার করছেন। তিনি বলেন- গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতেই প্রচারের মাধ্যমে বাল্ব বিক্রির চেষ্টা।

রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিশেজ্ঞ ডাক্তার ফিরোজ আলম বলেন, নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে আওয়াজ কান কখনোই সহ্য করতে পারে না। এতে সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দের তীব্রতায় মানুষ সাময়িক বধির ও ১০০ ডেসিবল স্থায়ী বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। উচ্চশব্দের মাইকিংয়ে মানুষের মস্তিককে চরম আঘাত করে। বিশেষ করে শিশুদের চরম ক্ষতি হয়।

Bootstrap Image Preview