বাল্যবিবাহ ও দারিদ্রতার কারণে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রাথমিক ও এবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (পিইসিই) পরীক্ষায় ১৯টি কেন্দ্রের ২৮৮জন পরীক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ১৪২ ও ছেলে রয়েছে ১৪৬ জন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর অনেকেই দারিদ্রতার কারণে গার্মেন্টসে, দোকানে ও গৃহস্থালী কাজে যুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়েছে।
পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছাত্রীদের মধ্যে ৭১ জন প্রাইমারী এডুকেশন কমপ্লিশন এক্সামিনেশন (পিইসিই) ও ৭১ জন এবতেদায়ী পরীক্ষার্থী। ছেলেদের মধ্যে পিইসিইতে ৮৭, এবতেদায়ীতে ৫৯। অনুপস্থিতির কারণ জানতে গিয়ে উপজেলার ১৯টি পরীক্ষা কেন্দ্র সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রাথমিক স্তরের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় ধুনট উপজেলাতেও পিইসিই ও এবতেদায়ী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ উপজেলার ২০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৬টি কিন্ডার গার্টেন ও ৫৭টি এবতেদায়ীসহ ৩০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৫৬৪ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিতে ডিআর ভুক্ত হয়েছিল। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ছেলে পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৩১২জন, এবং মেয়ে পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৭১৮ জন। এবতেদায়ী স্তরে এবার ৫৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ৩১১ জন ও মেয়ে ২২৩ জন।
পারলক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইবনে সউদ বলেন, অনেক চেষ্টা করেও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় অথবা সুবিধা মতো সময় গোপনে এই শিশু শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিয়ের রেজিস্ট্রির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না। অভিভাবকদের অসচেতনতাও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) কামরুল হাসান বলেন, বাল্যবিয়ে ও দারিদ্রতাই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারণ। বিশেষ করে যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত ধুনট উপজেলা। এই এলাকার অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র। শিক্ষা সচেতনতার অভাবে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেন।
এছাড়া সংসারের ঘানি টানতে বইখাতা ছেড়ে দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা বাবার সঙ্গে কাজে ঝুঁকে পড়ছে। তবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবেশ করা হয়।