জীবননগরে আবারও প্রতারনা করে উপজেলার ৮টি রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক ফেইজ-২) প্রকল্পের আওতায় আনন্দ স্কুলের টিসি শাহানারাসহ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ১ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) জীবননগর সোনালী ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীরা টাকা তুলে বাড়িতে ফেরার পরে যাওয়ার পথিমধ্যে ভুল বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে গত কয়েক দিন আগে জীবননগর সোনালী ব্যাংক থেকে উপজেলার ২৩টি আনন্দ স্কুলের ৩৩৫জন শিক্ষার্থীদের মাথাপিচু ১ হাজার ৫'শ ২০ টাকা হারে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ২'শটাকা সরকারিভাবে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হলেও উপজেলার ২৩টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষক ও টিসি শাহানারার যোগসাজে শিক্ষার্থীদের মাথাপিচু ৫২০ টাকা হারে মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ২'শটাকা তাদের প্রদান করা হয়। আর বাকি ৪ লাখ ২ হাজার টাকা বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
তবে দিন যেতে না যেতেই আবারও টিসি শাহানারা ও শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে ব্যাংকের বাইরে থেকে ভিন্ন উপায়ে কোমলমতি শিশুদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়।
আনন্দ স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারাজানা খাতুন ও বিথি খাতুন জানায়, ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৫২০ টাকা আমাদের হাতে দেওয়া হয়। বাড়িতে আসার সময় মুনজুরা আপা বলে তোমরা ৭৫০ টাকা রেখে বাকি ৭৭০ টাকা আমার কাছে দিয়ে যাও। এগুলো তোমাদের পরীক্ষার পর দিয়ে দিব।
একই অভিযোগ করে বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাবপুর দক্ষিণ পাড়া আনন্দ স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র শরিফুল ইসলাম ও শাহাবুল। তারা বলে, মুনজুরা আপা আমদের সকলকে ডেকে বলে কেউ টাকা নিয়ে বাড়ি যাবে না আমার সাথে বাড়ি যাবে এই বলে আমাদের সকলকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে আমাদের কাছ থেকে ৭৭০টাকা করে নিয়ে নেয় আর বাকি ৭৫০ টাকা আমাদের হাতে দিয়ে বলে এই টাকা নিয়ে বাড়ি যাও বাকি টাকা তোমাদের পরীক্ষার পর দেওয়া হবে।
এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করছেন টিসি শাহানারা ও শিক্ষকরা।
বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাবপুর দক্ষিণ পাড়া আনন্দ স্কুলরে শিক্ষক মুনজুরার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কোন শিক্ষার্থীর টাকা আত্মসাৎ করিনি আমাকে যে ভাবে বলা হয়েছে আমি তাই করেছি। এর বেশি আমি আর কিছুই বলতে পারবো না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক সময় ভাড়াটে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন টিসি শাহানারার। শুধু তাই নয় টিসি শাহানারার বিরুদ্ধে আগেও এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। শেষ পর্যন্ত মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।
আনন্দ স্কুলের টিসি শাহানারার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি তবে তদন্ত করা হচ্ছে তদন্ত শেষে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
এ দিকে গত দিনের যে টাকা আত্মসাত করেছে সে বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দিন যে সমস্ত শিক্ষক টাকা নিয়েছিলো তারা সবাই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জীবননগর সোনালী ব্যাংকরে ম্যানজোর আরিফুজ্জামানরে সাথে কথা বললে তনি বলনে, গত কয়েক দিন আগে ব্যাংক থকে উপজেলায় ২৩টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ হাজার ৫২০ টাকা করে প্রদান করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছিল আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে কেটে রেখেছিলো। এ বিষয়টি আমি শোনা মাত্র শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি। তাছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা দেয়ার সময় আমরা শিক্ষার্থীদের আইডি র্কাড দেখে টাকা চিয়েছি। ব্যাংক থেকে কোন শিক্ষার্থীকে টাকা কম দেওয়া হয় নি।
জীবননগর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আরিফুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে টাকা দেওয়া হলেও তাদের নিকট থেকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এবং তা প্রমানও হয়েছিল। গত দিনের মত সোমবারও একই ঘটনা ঘটে ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের ১৫২০টাকা দেওয়া হলেও কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ৭৫০টাকা করে দিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে বলে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে। এ বিষয়টি আমরা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি শুনেছি এবং টিসিকে বিষয়টি বলেছি, যে সমস্থ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যে টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।