প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলছে। প্রতিবারই অদম্য কিছু শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলে গণমাধ্যমগুলোতে। তেমনি এক অদম্য ছাত্র সিয়ামের কথা উঠে এসেছে। দুই হাত নেই, বাম পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য সিয়াম।
জন্মের পর থেকে দুটি হাতবিহীন জীবন সংগ্রামে নেমেছে হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী এই শিশুটি। মনে বিন্দুমাত্র হতাশা নেই। হতে চায় সে সরকারি বড় কোনো কর্মকর্তা। ইচ্ছা আর মনোবল নিয়েই এগুতে চায় সে।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) সকালে সরিষাবাড়ীর স্থানীয় মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পা দিয়ে লিখে বাংলা পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে তাকে। পরীক্ষা শেষে সিয়ামের সাথে কথা বলে জানা যায় তার অদম্য ইচ্ছার কথা।
জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতির জিন্না মিয়া ও জোসনা বেগমের ছেলে সিয়াম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। কিন্তু থেমে নেই তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা।
সে এবার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
পা দিয়ে লেখে পরীক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে সিয়াম বলে, আমার দুই হাত না থাকলেও তাতে আমার কোন সমস্যা হয় না। পা দিয়ে লিখতে লিখতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আমার সব কাজ আমি নিজেই করতে পারি।
সিয়াম বল, আমি লেখাপড়া করতে চাই। লেখাপড়া করে সরকারি বড় একটা কর্মকর্তা হতে চাই। কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করতে চাই।
সিয়ামের মা জোসনা বেগম বলেন, সিয়ামকে কখনও লেখাপড়া করার কথা বলতে হয় না। কিছু কাজ ব্যতীত সকল কাজ সিয়াম একাই করে।
তিনি বলেন, অর্থের অভাবে ছেলেকে কখনো ভালো কিছুই খাওয়াতে বা পরাতে পারি না। ওর নামে একটা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়েছি। সেই টাকায় কিছুই হয় না। সরকারি ভালো কোনো সহায়তা না দিলে সিয়ামের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতনের প্রধান শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা জানান, সিয়ামের পরিবার দরিদ্র, তবুও তার পড়ালেখার প্রতি ইচ্ছে প্রবল। মাসে ২৫০ টাকা বেতনও দিতে পারতো না। পরে পরিবারের সাথে কথা বলে বেতন মওকুফ করে আবার পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম সিয়ামের খোঁজ নিয়ে তার সহায়তার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান।