একটা পাসপোর্ট করার জন্য ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত একাধিক বার চেষ্টা করেও পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেননি কাওশার। কাওশারের মত এমন আরো কয়েক হাজার তরুণ দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট অফিসে আশা-যাওয়া করেও পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত বইটি।
কাওশার বলেন, আমি ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(অনিয়মিত) থেকে A পেয়ে HSC পরীক্ষায় পাস করেছি। পরে কলেজের বন্ধুদের সাথে একটি এডুকেশন ফেয়ারে গিয়ে জানতে পারি মাত্র ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চায়না গিয়ে লেখা পড়ার সুযোগ আছে। আর এর জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন তার সব থাকলেও বিহারী ক্যাম্পে থাকার কারণে পাসপোর্ট পাইনি।
কারণ আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আমাদের ক্যাম্পের বাড়ির ঠিকানাতে করা। আর আমি এই ঠিকানা থেকেই আমি পাসপোর্ট ফরম করেছিলাম। যার ফলে আমাকে পার্সপোট দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার সাথের মোট ৬জন বন্ধু এখন চায়নাতে বিভিন্ন ইঞ্জিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া করছে। টানা একবছর চেষ্টা করেও আমি একটা পাসপোর্ট বই করতে পারলাম না। এখন অনেকটা মনের সাথে যুদ্ধ করে একটা বি-গ্রেটের বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বিহারী শব্দটি শুনলেই আমাদের বেশিভাগ মানুষের চিন্তা চেহতনায় প্রথমে যে কথাটি আছে, সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালে আটকে পরা উর্দু ভাষাতে কথা বলার মানুষের চিত্র। যারা বাংলাদেশের একাধিক শরণার্থী ক্যাম্পে তিন পুরুষ ধরে বসবাস করে আসছে। যাদের ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি না থাকলেও হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২০০৮ সাল ভোটার অধিকার লাভ করে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তারা রাষ্ট্রের অন্যান্য মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
বিহারী নেতারা বলছেন, নির্বাচন আসলেই আমাদের কদর বাড়ে, তা ছাড়া আমাদের দেখার কেউ নেই।
বিহারীদের অধিকার আদায় নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করে আসছে ‘উর্দুভাষী যুবক পুনর্বাসন সংগ্রাম’। এর প্রধান সাদাকাত খান বলেন, নেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সংবিধানের ১২২ এর ২ ধারা মোতাবেক ভোটাধিকার পেয়েছি । আর একজন জাতীয় পরিচয়পত্র-ধারী নাগরিক, সংবিধান অনুসারে দেশের পূর্ণ নাগরিক। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আমাদের ন্যাশনাল কার্ডের ঠিকানাতে দেওয়া হচ্ছে না পার্সপোট।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই ঢাকা ১৩ আসনের ৪টি ক্যাম্পে নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোটার আছে। আর এ কারণের প্রতিটি রাজনৈতি দলগুলো আমাদের ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচনের সময় একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাদের সমস্যা গুলোর সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরে কেউ আমাদের খবর রাখে না।
আমরা কাগজে কলমে ১০ বছর আগে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও দেশের মৌলিক অধিকারগুলো কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। বলা চলে এক প্রকার মানবেতর জীবন যাপন করছি। না আছে খাবার পানির সুব্যবস্থা, না আছে পয়নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা। এমনি আমাদের ঘরের মা- বোনদের জন্য একটা পরিবেশ সম্মত গোসলখানাও নেই। কিন্তু সবাই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল।
আপনি বলছিলেন, আপনাদের ভোট ব্যংক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধুমাত্র আমাদের এই ক্যাম্পে বর্তমানে নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার ভোট আছে। যা একজন প্রার্থীর জয়ের জন্য অনেক বড় ফ্যাক্ট। আর ২০০৮ সালের পর থেকে এমপি বা কমিশনার যেই হোক না কেন আমাদের কেন্দ্র থেকে যে জিতেছে সেই বিজয়ী হয়েছে। তাই আমাদের সবাই ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের পরে আমাদের দেখলে নাক সিটকায়।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করা হলে অফিসিয়ালি কেউ কথা না বললেও, নাম না প্রকাশের শর্তে একজন কর্মকতা বলেন, বিহারিদের যে ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছে তা কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট বাসার ঠিকানাতে দেওয়া হয়নি। তাদের একটি এলাকার নামে কার্ড দেওয়া হয়েছে। আর এর কারণেই তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানাতে পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না।
বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস (আগারগাঁও) এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে বললেন, ২০০৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিহারিদের যে ন্যাশনাল কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্দিষ্ট বাসার ঠিকানাতে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছিল একটি ক্যাম্পের ঠিকানাতে। আর পাসপোর্টের ফরমে মূলত স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা দিতে হয় ।কিন্তু বিহারিরা ক্ষেত্রে এই দু’টির কোনো দিতে পাচ্ছে না । যার কারণের তাদের জাতীয় কার্ড থাকা পরেও আমরা পাসপোর্ট সেবা দিতে পারছি না।তবে আশা করছি খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করতে পারবো আমরা।