সংঘাতপূর্ণ মালি ও শহর গাও-তে জাতিসংঘের মিশনে কাজ করছেন সুপারিন্টেনডেন্ট ক্যাথরিন উগুরজি। দুর্দান্ত এ নাইজেরীয় নারী পুলিশ সদস্য বুরকিনা ফাসো এবং তিউনিসিয়া থেকে আসা সহকর্মীদের সাথে পরিষ্কার ফরাসি ভাষা কথা বলেন।
একজন নারী হিসেবে জাতিসংঘের ওই ঘাটিতে তার উপস্থিতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক; যেখানে কাঠের তৈরি বাড়িঘর, ভবন, মেস এবং ফুটবল মাঠ সব স্থানেই পুরুষদের আধিপত্য।
মালির ১৫ হাজার সদস্যের শক্তিশালী শান্তিরক্ষী মিশনে যে ৪৭৭ জন নারী পুলিশ ও সেনা সদস্য মালিতে কাজ করছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। পুরুষদের আধিপত্যের এমন জায়গায় তিনি নারী -বিষয়টি তাকে খুব একটা ভাবাচ্ছে তেমন নয়। তিনি বলেন, ‘আমি কাজ পছন্দ করি, যেসব কাজ পুরুষ করে বলে মনে করা হয়, সেটাই আমি করতে পছন্দ করি।’
শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে আরও বেশি সংখ্যায় নারী সদস্য নিয়োগ করতে চাইছে জাতিসংঘ। কিন্তু এর নীল হেলমেট-ধারীদের মধ্যে খুব সামান্যই নারী। মালিতে নারী শান্তিরক্ষী সদস্যরা দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় কাজ করছে। তবে এ কাজে নারীদের টেনে আনা ভীষণ কঠিন।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী শান্তিরক্ষী মিশন হিসেবে মালির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের ১০৬ জন সদস্য শত্রুবাহিনীর হাতে খুন হয়েছে এবং আরও বহু মানুষ বিভিন্ন দুর্ঘটনা এবং অসুস্থতায় প্রাণ হারিয়েছে।
এদিকে উগুরজি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে কাজ করতে অভ্যস্ত। অপরাধীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোসের রাস্তায় অপরাধীদের দমন করতে তার ভূমিকা ছিল কঠোর। তার সময়কালে লাগোসের আশপাশে মাদক ব্যবসায়ী এবং অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তার অভিযান শান্তিরক্ষী হিসেবে জিহাদিদের আস্তানায় (মালিতে) তার কাজ ‘বেশ সহজ’ বলে মনে হয়েছে জানান তিনি।
বলেন, ‘লাগোস খুবই কঠিন জায়গা, সেখানে একজন বিভাগীয় পুলিশ অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। আমার দায়িত্ব সার্বক্ষণিক, রাতের বেলা অপরাধীদের আনাগোনা চলে।’
২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের যুক্ত হয়েছেন তিনি। দিন শেষে অবসরে হোয়াটসঅ্যাপে স্বামী এবং তিন সন্তানের সাথে যোগাযোগ করেন। অথবা জিমে গিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য ব্যায়াম করেন।
মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন এবং গোয়েন্দা উপদেষ্টা জেয়সি জিমেনেয বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কারণে গাও-তে স্থানীয় মহিলাদের অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে দেখা যায় না, কিন্তু তারা উগুরজির মত যেকোনা নারী পুলিশের সাথে মুক্তভাবে কথা বলতে পারে এবং তাদের আশেপাশে অস্বাভাবিক কোনোকিছু নজরে এলে তা অবহিত করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা দায়িত্বে নারীদের গুরুত্ব সত্ত্বেও এর বিরোধিতাও কম নয়। একজন সেনেগালিজ কমান্ডার তার ইউনিটের কিছু নারীকে টহল-কাজে অনুমতি দিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। যদি তাদের সাথে বাইরে কোনো বাজে ঘটনা ঘটে তাহলে তার নেতিবাচক প্রচারণা কী হতে পারে সেটি কল্পনা করেই এমনটি করেন ওই কমান্ডার।’
মালির শান্তি রক্ষা মিশন পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে বিশ্বে শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৪ শতাংশ এবং পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ১০ শতাংশ নারী। তবে তাদের জীবনে মৃত্যু কিংবা আহত হওয়াই একমাত্র ঝুঁকি নয়। আরও অনেক ধরনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলতে হয়।
চলতি বছরই ১০টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে নারীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন এবং মিডিয়াকে জানান, তাদের চাকরিচ্যুত করার কিংবা চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়া হয়েছিল। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছিলেন তারা বহাল তবিয়তে আছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব যেকোনো হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেটি গাও-এর জন্য খুব একটা মানানসই নয়।
ক্যাপ্টেন ও তিউনিসিয়ার সামরিক ইঞ্জিনিয়ার আহলেম ডৌযি জানান, ‘দক্ষতায় নারী ও পুরুষের পার্থক্য আছে বলে মনে করা হয় না, কিন্তু এখানে এ নিয়ে সংকীর্ণ চিন্তা-ভাবনার সংকীর্ণতা রয়েছে।’