দল থেকে বহিস্কারের পর দল তৈরীর করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না নাজমুল হুদা। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ফেঁসে গেলেন তিনি।
‘রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের’ এক ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে চার বছর কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের কপিটি বিচারিক আদালতের হাতে পৌঁছানোর ৪৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
রায়ে বলা হয়, দুর্নীতি একটি অভিশাপ। সমাজের সবক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা যায়। দুর্নীতি সমাজের নৈতিক অবস্থা নষ্ট করে এবং সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতি কেবল নৈতিক অবস্থাই নষ্ট করে না বরং এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ঘটনা ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, আপিলের কোনো সারবত্তা পাওয়া যায়নি। আপিল খারিজ করা হলো। বাকি সাজা ভোগ করতে বিচারিক আদালতের রায়ের কপি গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলকারী (নাজমুল হুদা) বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। এতে ব্যর্থ হলে বিচারিক আদালত তার গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
হুদা দম্পতির আপিলের ওপর পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ ওই রায় দেন। দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি লেখা শেষে সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে আজ রবিবার ৬৭ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ পায়। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদার সাত বছর এবং তার স্ত্রী সিগমা হুদার তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়।
এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তারা। বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদাকে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এই রায়ে নাজমুল হুদার সাজা কমিয়ে সাত বছরের জায়গায় চার বছর কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে এ মামলায় তিন বছরের দণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত। তার মধ্যে যে পরিমাণ সাজা তিনি খেটেছেন, তাই শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এই রায়ে।
নাজমুল হুদার আইনজীবী আশানুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি এখনো বিচারিক আদালতে পৌঁছায়নি। এই রায় বিচারিক আদালতের গ্রহণ করার ৪৫ দিনের মধ্যে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এ হিসেবে ৪৫ দিন সময় আছে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ দুদকের উপপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সিগমা হুদার মালিকানাধীন সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র অ্যাকাউন্টে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের ঠিকাদার মীর জাহের হোসেনের কাছ থেকে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন নাজমুল হুদা। একই বছরের ২৭ আগস্ট বিচার শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত নাজমুল হুদাকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই কোটি টাকা জরিমানা এবং তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ২০১১ সালের ২০ মার্চ এই দম্পতিকে ওই সাজার রায় থেকে খালাস দেন। পরে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর ওই খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে পুনঃশুনানিতে পাঠায়। গত বছরের ৮ নভেম্বর পুনঃশুনানি শেষে হুদা দম্পতির আপিল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।