সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গৃহবধূ, মেয়েরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ডালের তৈরি বড়ি বানাতে। শীতকে স্বাগত জানিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বড়ি তৈরি প্রক্রিয়া। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পাড়া মহল্লার গৃহিণী, মেয়েরা এ মজাদার খাবার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার সদরের মোবারাপুর গ্রামের আছমা বেগম দুলি জানান, প্রতি বছর শীত এলে চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন তারা। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করা হয় দীর্ঘদিন। পরে বিভিন্ন তরকারি রান্নার সময় বড়ি ছেড়ে দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
বড়ি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় কালো কলাই ও চালকুমড়া। কুমড়ার পরিবর্তে অনেকে মুলা, পেঁপেও ব্যবহার করেন। বড়ি তৈরির আগের দিন মাষকলাইয়ের ডাল খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সন্ধ্যায় চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কোরানি দিয়ে কুমড়া কুরিয়ে মিহি করে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে কুমড়ার পানি বের হয়ে ঝরঝরে হয়ে যাবে। এবার কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবণ ভালো করে মেশাতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে ঢেঁকি বা যাতায় পিষে পেস্টের মতো করতে হবে।
আরও কয়েকজন নারী জানান, একত্রিত হয়ে তারা বড়ি বানান। ধনী-গরিব সবাই এ বড়ি খুবই পছন্দ করেন। কারণ, এটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজি করেও খাওয়া যায়। কুমড়ার বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।
চালকুমড়ার ব্যাবসায়ী আতাউর রহমান এলিট জনান, শীতের শুরুতে গ্রামঞ্চালের গৃহিনী, মেয়েরা বড়ি তৈরি করতে ব্যাস্ত সময় পার করে। আমি এ সময় অন্য অঞ্চাল থেকে কুমড়া কিনে এই অঞ্চালে বিক্রয় করি, ভালো লাভ হয়। প্রতিটা কুমড়া ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রয় হয়। আর সেই সাথে ডালও বিক্রয় করেন ব্যাবসায়ীরা প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তা ছাড়াও অনেকে বড়ি বানিয়ে বাজারজাত করেন তারপরও অনেকে বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।