Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

'ভালো করে ছবি তুলে নেন, সবাইরে দেখান এসব'

মক্তবে বেঁধে রেখে বৈদ্যুতিক শক দেওয়াতে মানসিক ভারসাম্যহীন আলেয়া

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৪ PM
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি গুরুতর আকার ধারণ করার সাথে সাথে সহনীয় হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। পাশবিক নির্যাতনের পরে দেশে ফেরত আসার ঘটনা চলমান ধারা অব্যাহত রেখে দেশে ফিরেছেন আরও ২৪ নারী গৃহকর্মী। গতকাল শুক্রবার রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তারা।

ফেরত আসা এসব গৃহকর্মীদের প্রায় একইরকম অভিযোগ। কাজের জায়গার পরিবেশ ভালোনা, দেশে যোগাযোগ করতে দেয়না, মালিকরা ঠিকমতো খাইতে দেয়না, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন নির্যাতন করে থাকে। মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করায়, বেতন চাইলে পাশবিক নির্যাতন চালায়। 

নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে নির্যাতনের চিহ্ন দেখাতে দেখাতে মাদারীপুরের লায়লা আক্তার বলেন, 'ভালো করে ছবি তুলে নেন, সবাইরে দেখান এসব। সৌদিতে কাজ করার জন্য কেউ কারো মেয়েরে পাঠায়েন না। যে অত্যাচার করে সেখানে তার থেকে দেশে না খেয়ে মরে গেলেও ভালো। আমার শুধু হাতে না, এমনসব জায়গায় অত্যাচারের চিহ্ন আছে যেগুলো আপনাদের দেখাইতে পারবোনা। দেশে গিয়ে কাজ করে খাওয়ার মতো শক্তি আর গায়ে নাই আমার।'

প্রসঙ্গত, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে কেবল সৌদি আরব থেকেই গত ৩ বছরে ফিরেছেন চার হাজারের বেশি নারী শ্রমিক। তারা বলছেন, সম্মানজনক কাজ দেওয়ার কথা বলে দেশটিতে নিয়ে গেলেও যাওয়ার পর থেকে তাদের আটকে রেখে মারধর ও যৌন নির্যাতন করা হয়। অকথ্য নির্যাতনে অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে।

অথচ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বলছেন, যারা ফিরছে তাদের পক্ষ থেকে করা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সবক্ষেত্রে সত্য নয়। তাদের দাবি সরকারি-বেসরকারিভাবে যাওয়া শ্রমিকদের দায় নেবেন কিন্তু যে বিশালসংখ্যক নারী অবৈধভাবে যান, তাদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়ে যায়।

ফেরত আসা নারী কর্মীদের মধ্যে আরো ছিলেন দু’জন মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের মধ্যে বগুড়ার জামিলনগর এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আলেয়া বেগম কোনো কথা বলতে পারছেন না। নিজের ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলছেন, 'বগুড়া। বগুড়া বাড়ি আমার। বগুড়া।'  

তার সঙ্গে আসা অন্য এক নারী কর্মী জানান, আলেয়া বেগমকে মক্তবে বেঁধে রেখে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। তাই তার অবস্থা এরকম।

অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বোমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘শুধু যে গতকালই ২৪ জন ফিরেছেন। গতকালই শুনেছেন নির্যাতনের কথা তা কিন্তু নয়। প্রতিনিয়তই সর্বস্ব হারিয়ে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে নারী গৃহকর্মীদের দেশে ফেরার ঘটনা রয়েছে।সরকারের অবশ্যই উচিত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জিরো টলারেন্স হিসেবে নেয়া। আর যদি সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারে তাহলে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।' 

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা নারীদের নিয়ে শুধু একটাই কথা বলতে চাই যে, সৌদি মালিকরা যদি নিরাপত্তা, সুরক্ষা, মর্যাদা ও অধিকার–এ চারটি জিনিস না দিতে পারে তাহলে আমাদের মেয়েদের ওখানে পাঠানোর কোনও প্রয়োজন নেই।’

উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন; যা মোট অভিবাসনের ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একা অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের অভিবাসনে বাধা দেওয়া হলেও পরে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তা কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে। কিন্তু ২০১৬ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ১৬ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ১৩ শতাংশে।

এর বাইরে কত নারী কী উপায়ে বিদেশ গেছেন সে পরিসংখ্যান নেই। প্রবাসী নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা এবং এজেন্টদের ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিদেশে ঘটছে দুর্ঘটনা, মেয়েদের জীবন পড়ছে শঙ্কায়।

Bootstrap Image Preview