Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিরবিচ্ছিন্ন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন চালু

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:২৬ PM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:২৭ PM

bdmorning Image Preview


১ হাজার ৫ শত জিবিপিএস (গিগা বাইটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সুবিধার নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটে সংযুক্ত এখন বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলীর গোড়া আমখোলা পাড়ায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্টেশন চালুর মাধ্যমে এ সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে পৌছেছে বাংলাদেশ।

এর ফলে উন্নত টেলিযোগাযোগ খাতে ঘটেছে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নেটওয়ার্ক দেশের অভ্যন্তরের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। 

বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি'র বেশি। ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সংখ্যা। কক্সবাজারে একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হত। কক্সবাজারে স্থাপিত প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল থেকে তিন'শ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পেত বাংলাদেশ। বিদ্যমান সাবমেরিন স্টেশনটির কেবল লাইন কাটা পড়লে বিএসসিসিএলের কাছে নেটওয়ার্ক সরবরাহের আর কোন সক্ষমতা বা উপায় ছিল না। ফলে ইন্টারনেট সেবা গ্রহীতারা প্রায় সময়েই চরম দুর্ভোগের শিকার হত। 

এ দুর্ভোগ লাঘবসহ তথ্য প্রযুক্তিতে বিশ্বের সাথে একটি নিবিড় বন্ধন তৈরির পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনতে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারসহ নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিতে পটুয়াখালীর পর্যটন উপজেলা কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের আমখোলা পাড়ায় নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন।

এ ল্যান্ডিং স্টেশন র্নিমাণের ফলে ডাটার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পনের'শ জিবিপিএস ব্যন্ডউইথসহ দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে এখন গ্রাহকরা। প্রথম প্রকল্পটির লাইফ টাইম শেষে দ্বিতীয় প্রকল্প দিয়েই পুরো দেশে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। এজন্য এ ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে প্রথম সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত যুক্ত করতে তৈরি করা হয়েছে একটি ব্যাকবোন।

প্রতিষ্ঠানটির সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আমখোলা পাড়ায় ১০ একর জমির উপর ছয়'শ ষাট কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটিতে সরকার ১৬৬ কোটি ও বিএসসিসিএল ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)।

এ কেবলের মালিক ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তন, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। এসইএ-এমই-ডব্লিউই- ৫ নামের নতুন এ কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। এ কনসোর্টিয়াম দিয়ে ২০হাজার কিলোমিটার এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কেবলের উন্নয়ন কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়েস্টার্ন ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করতে সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল স্থাপন করা হয়। সমুদ্রের তলদেশের ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে সর্বদা অনলাইনে থাকবে এবং আন্তর্জাতিক দ্রুতগতির ব্যান্ডউইথ ট্রেডের সঙ্গে পুরাপুরিভাবে যুক্ত এখন বাংলাদেশ। 

২০১৬ সালের নভেম্বরে সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দ্রুত গতিতে চলে কাজ। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ করা হয় অবকাঠামোসহ ল্যান্ডিং স্টেশন, ফাংশনাল বিল্ডিংয়ের মূল স্থাপনা, ডরমিটরি, নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যারাক, রেস্ট হাউজ, ড্রেনেজসহ অানুষাঙ্গিক অবকাঠামো। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নিজস্ব ইলেকট্রিক্যাল পোস্টের কাজ। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্যাবল সংযোগের চূড়ান্ত কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে দেরি হয়।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ এর সংযোগ স্থাপন করে বিএসসিসিএল। 
কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে নয় কিলোমিটার দূরত্বে উপকূলের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে আসা লাইনটির সংযোগ স্থাপনের কাজ শেষে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ১৭টি দেশের ১৯টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সভা থেকে ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংযোগ চালু হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর আরো ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস (গিগা বিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি। 

বিএসসিসিএল সূত্র আরো জানায়, এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কনসোর্টিয়ামের আওতায় কক্সবাজারে প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। এর মাধ্যমে দেশের আইসিটি ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর চাহিদার বড় অংশ পূরণ করছে কোম্পানিটি। সাবমেরিন কেবল ওয়ানের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এ সাবমেরিন কেবলটি চালুর ফলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। দেশিয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইডথ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় অংকের অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। বিএসসিসিএলের মুনাফাও বাড়বে। 
 

Bootstrap Image Preview