Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

দিনাজপুর-১ আসনে চলছে আ.লীগের 'মনোনয়ন রাজনীতি'

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৬ PM
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


যত দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। তফসিল যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী ২৩শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরইমধ্যে ঘোষণা অনুযায়ী হাতে সময় রেখে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের দলের মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে।

এক্ষেত্রে সবার প্রথম মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। শুরু থেকে আজ (১১-১১-২০১৮ ইং) তিন দিনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বিক্রি করেছে প্রায় নয় কোটি টাকার উর্ধে। সারাদেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনি আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে যে পরিমাণ মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনি আসন থেকে এক, দুই কিংবা তিন নয় কখনো সেটা পাঁচ কিংবা দশের ঘর ছাড়িয়েছে, যারা কিনা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এমন অবস্থার ব্যতয় ঘটেনি দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল)নির্বাচনী আসনেও।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র ছাড়ার তিন দিনের মধ্যে শুধু বীরগঞ্জ-কাহারোল আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন মোট ছয় জন। তাদের মধ্যে আজ (রবিবার) সকালে ঢাকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডি থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান আ.লীগ কৃষি ও সমবয় উপকমিটি সদস্য আবু হুসাইন বিপু।

দুপুরের পর পরই মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে আলোচনায় আসেন বীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি জাকারিয়া হোসেন জাকা এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন বাবুল। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, একই আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক সাংসদ ও বর্তমান বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম।

এদিকে উক্ত আসনের বর্তমান সাংসদ বাবু মনোরঞ্জণ শীল গোপাল গতকালই(১০-১১-১৮)তার দলের পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন এবং আজ জমা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, নিজ দলের হয়ে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে এসে ঢাকায় অবস্থান করছেন বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি শিবলি সাদিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত আরো জানা যায়, এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে লড়তে চান দশের অধিক জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, দিনাজপুর-১ আসন থেকে যারা এখন পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন তারা ছাড়াও আরো পাঁচ থেকে সাত জনের অধিক মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করবেন। এর মধ্যে কাহারোল উপজেলা আওয়ামী লীগের থেকে শুরু করে একইসাথে রয়েছে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও।

সম্ভাব্য আরো যারা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করবেন তারা হলেন- মালেক সরকার, ইনি সাবেক সাংসদ ও আ.লীগ নেতা ছিলেন। এ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম বর্তমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। আরো রয়েছেন কাহারোল আওয়ামী লীগ ও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা গপেশ চন্দ্র রায় এবং কাহারোল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম সরকার।

একটি দলের হয়ে এত নেতা কেনো মনোনয়ন সংগ্রহ করছে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় ভোটার ও সাধারণ মানুষের মাঝে, একইসাথে বইছে আলোচনার ঝড়। স্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিক বোদ্ধারা এই ব্যাপারটা দেখছেন একটু অন্যভাবে এবং তারা এটার নাম দিয়েছেন 'মনোনয়ন রাজনীতি'।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় রাজনীতিক ও ভোটার বলছেন, 'যেহেতু একই দল থেকে একসাথে এত লোক মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন সেহেতু পূর্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হেবি ওয়েট প্রার্থীরা নিজের টাকা দিয়ে একাধিক নেতাকে মনোনয়ন সংগ্রহ করায় এবং চূড়ান্ত বাছাই এর সময় হাই কমান্ড যখন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে যে কোন একজনকে নির্বাচিত করার জন্যে সবার মতামত চায় তখন যার যার পক্ষের নেতা তাকে তাকে সাপোর্ট দেয়। এতে খরচ একটু বেশি হলেও মূলত আসলেই যে নির্বাচন করতে চায় সে অনায়াশে বিনা ঝামেলায় মনোনীত হতে পারেন।

অন্যদিকে, সাধারণ ভোটাররা এই বিষয়টাকে দেখছেন সহজ দৃষ্টিতে। তারা বলছেন দলের ভেতরে যদি গোপন কোন্দল না থাকে তাহলে এমন হবার কথা নয়। স্থানীয় ভোটার ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মনে করছেন যদি দ্রুত এই কোন্দল মিমাংসা না করা হয় তবে এখানকার আসনে নৌকা প্রতীক ক্ষমতায় আসবে কি না সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

এত এত নেতা মনোনয়ন নিচ্ছে কেনো? এমন প্রশ্ন রেখে বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলা আওয়ালী লীগের দায়ীত্বশীল ও সাংগঠিক নেতা-কর্মীদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু কারো সাথেই কথা বলা সম্ভব হয়নি। যে দু'এক জন কর্মীদের সাথে কথা বলা হয়েছে তারাও নিজেরা ধোঁয়াশায় থাকার কারণে পরিষ্কার কোন ধারণা দিতে পারেননি।

Bootstrap Image Preview