Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

২০১৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে ৬৬০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ

দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ হাব হচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৮ PM
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৮ PM

bdmorning Image Preview


জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

২০১৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে ৬৬০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। এর ঠিক ছয় মাস পরে একই প্লান্ট থেকে আরো যুক্ত হবে ৬৬০ মেঘাওয়াট। এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই দিনরাত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেশের প্রথম ও বৃহৎ পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তি সম্পন্ন ১৩২০ মেঘাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের র্নিমাণকাজ। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পুরনে এটি হবে একটি মাইল ফলক। এমন অভিমত সংশ্লিস্টদের।

পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০ এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ ভাগ কয়লাভিত্তিক উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব (আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে) দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে।

বাংলাদেশ এবং চীনের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫সালের ২১ মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন দুই বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে বাংলদেশ এবং চীন যৌথভাবে বিনিয়োগ করছে।

নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (ঘডচএখ) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (ঈগঈ) সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (ইঈচঈখ) মালিকনাধীন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিনিয়োগ করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ এবং চীনের সমান অংশীদারিত্বের নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসছে ২০১৯ সালের এপ্রিলে।

কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রায় ১ হাজার ১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন এবং মূল অবকাঠামোর সুরক্ষা করা বাবদ (ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন ফর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড’র অধীনে ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি.(এনডিই) করছে ভূমি উন্নয়ন কাজ। মুল অবকাঠামা নির্মান কাজ করবে ইঞ্জিনিয়ার্স প্রকিউটমেন্ট কনেসট্রাশন(ইপিসি)।

এ জন্য পায়রায় নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বাল্ক কোলইয়ার্ড ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা সরাসরি পায়রা বন্দর হয়ে এই কোলইয়ার্ডে আসবে। কয়লাভিত্তিক হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশবান্ধব করার পরিকল্পনায় শকস অ্যান্ড নকস কন্ট্রোল করার জন্য ডি সালফারাইজেশন প্ল্যান বসানো হচ্ছে। কয়লা যেন ছড়িয়ে না যায়, সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সূত্র জানায়, প্রথম ইউনিটের কাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় ইউনিটের ভিত্তি প্রস্তর হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটির জন্য অস্থায়ী জেটি নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। চলছে স্থায়ী জেটি নির্মাণের কাজ।

প্রকৌশলী জার্জিস তালুকদার জানান, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরবর্তীতে আরো একটি কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট প্লান্ট নির্মিত হবে। জার্মানির সিমেন্স এজির সাথে সম অংশিদারিত্বে ভিত্তিতে এলএনজি ভিত্তিক ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করা হবে।

এ ছাড়াও সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে ১০০ মেঘাওয়াট ও বায়ুটাপকে কাজে লাগিয়ে আরো ৫০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ১৩২০ মেগাওয়াটের এই প্রকল্পে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। পর্যায়ক্রমে নয় হাজার মেগাওয়াটের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট বিনিয়োগ হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বলে জানান তিনি।

এই প্রকল্প ছাড়াও এর আশেপাশে পর্যায়ক্রমে এনডব্লিপিজিসিএল ৬২৪০ মেগাওয়াট, সিএমসি’র সাথে সম অংশীদারিত্বে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) ১৩২০ মেঘাওয়াট এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন লিমিটেড ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। মোট ১৬,২৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে এখানেই দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

২৭ অক্টোবর ১৩২০ মেঘাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য পূর্নবাস পল্লীর উদ্বোধন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে ৩০ হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি একটি চর খোজা হচ্ছে। সেখানে পরমানু প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, পায়রায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য কোরিয়ার একটি কোম্পানির মাধ্যমে ৪০০ কেভি এবং চীনের একটি কোম্পানির মাধ্যমে একটি ২৩০ কেভির সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। গোপালগঞ্জে সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। এখান থেকেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া সঞ্চালন লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০১৯ সালের এপ্রিলে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও বিদ্যুৎ পরিবহন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হবে এরও দুই মাস পর। উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পরও কেন্দ্রটির বসে থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও আবাসন প্রকল্প নির্মাণ কাজও রয়েছে শেষ পর্যায়ে। ১৬ একর জমির ওপর এই পুনর্বাসন পল্লীর অধিকাংশ ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ। দু’টি ডিজাইনে করা হয়েছে এই সেমিপাকা ঘরগুলো। যেসব পরিবারের ২০ শতকের বেশি জমির বসতি নষ্ট হয়েছে তাদের জন্য সাড়ে সাত শতক জমিতে ১২শ’ বর্গফুট আয়তনের ৮২টি এবং যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ শতক জমিতে এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪৮টি ঘর করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরে ১৫ দশমিক সাত ফুট আয়তনে বাথরুমসহ একটি মাস্টার বেডরুম, দুইটি ১৫ ফুট আয়তনের বেডরুম, ১০ দশমিক চার ফুট আয়তনের একটি ডাইনিংরুম, ১২ দশমিক দুই ফুটের রান্না ঘর ও একটি কমন বাথরুম রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরের সামনেই খালি জায়গা থাকছে। যেখানে সবজির আবাদ কিংবা গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগি পালনের সুযোগ থাকছে।

এ ছাড়া রয়েছে ৩৬ হাজার ৯২৯ এবং ২৪ হাজার ৫৫৪ বর্গফুট আয়তনের দুটি পুকুর। নিরাপদ পানির জন্য ৪৮টি গভীর নলকূপ। ২৩ শতক জমিতে আধুনিক দ্বিতল মসজিের কাজ শেষ পর্যায়ে। ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের দ্বিতল কমিউনিটি সেন্টার। যার নিচতলায় থাকছে ক্লিনিক। রাখা হয়েছে খেলার মাঠ, একটি শপিং সেন্টার, ঈদ-গাঁ মাঠ, নির্দিষ্ট কবরস্থান। একটি স্কুল ভবন। যেখানে টেকনিক্যাল শাখার অগ্রাধিকার থাকছে। ভেতরের পানি নিষ্কাশনের সাড়ে চার কি.মি. ড্রেনসহ ভেতরের ১২ ফুট প্রস্থ দুইটি সড়ক করা হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিএ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জুন মাসে এই পুনর্বাসন পল্লীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে দশমিক তিন পয়সা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

Bootstrap Image Preview