Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব

আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০২ PM
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৪ PM

bdmorning Image Preview


ফসলি জমিতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হতে চলছে উপজেলার ফসলি জমি। উপজেলার ২২ ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ড্রেজার প্রতিনিয়ত কৃষি ও সরকারি খাল-বিল থেকে মাটি কাটছে। ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

এদিকে বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে মাঠে গেলে ব্যবসায়ীরা ড্রেজার চালানো কয়েক ঘন্টা বন্ধ রাখলেও প্রশাসন চলে গেলে আবার পুনরায় শুরু করে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মহোৎসব। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা, কালারাইয়া, দীঘিরপাড়, বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রাম, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের ব্রা‏হ্মন চাপিতলা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া, যাত্রাপুর, রঘুরামপুর, ভবানীপুর, টনকি ইউনিয়নের টনকি, বাইড়া, চাপিতলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, চাপিতলা, পুস্করিনীর পাড়, শ্রীকাইল ইউনিয়নের রোয়াচালা ও সোনাকান্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে চলছে রমরমা ড্রেজার ব্যবসা।    

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট তাদের দু:খের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা জানান, খামার গ্রামের সৌকত কালারাইয়া মৌজায় ৪ বিঘা জমি নিয়ে ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের ফসলী জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ বিঘা জমি এখন ৭ বিঘায় উন্নীত হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কমমূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সে ধনপতিখোলা গ্রামের উত্তর মাঠে কৃষি জমিতে ড্রেজার চালাচ্ছে। আশেপাশের জমির মালিকগণ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভূমি অফিসে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছে না।

অভিযোগকারীরা প্রতিবেদকের কাছে তাদের দুরবস্থার কথা জানালেও অধিকাংশরা সৈকতের ভয়ে মুখ খুলছে না। অবৈধ ড্রেজারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আতংক ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। তিনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, এ উপজেলায় মোট কৃষি জমি আছে ৫১ হাজার ২শত ৪ হেক্টর। চাষাবাদযোগ্য ২৪ হাজার ২৮ হেক্টর। এর মধ্যে দুই ফসলি ও তিন ফসলী জমিই বেশী। প্রায় সব ইউনিয়নেই চলছে ড্রেজার। প্রায়ই কৃষকরা অভিযোগ করে যে, তাদের কৃষিজমি ড্রেজিংয়ের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এক শ্রেনির অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কারণে উপজেলার কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমার কাছে আইনী কোন ক্ষমতা নেই। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জনপ্রতিনিধিদের সম্বন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।

বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হালিমা আক্তার বলেন, আমি সৌকতসহ আমার ৪টি মৌজায় যারা ড্রেজিং করছে তাদের প্রত্যেককে কয়েকবার করে বাধাঁ দিয়ে আসছি। আমি বাধাঁ দেওয়ায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি কি করে অফিস করি তারা আমায় দেখে নিবে বলে শাসায়। বাধ্য হয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও স্যারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।

রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, ড্রেজার বন্ধ করতে সহসাই স্যারের সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম বলেন, কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় না চালানোর জন্য কয়েকজন ড্রেজার মালিককের কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয়েছে। বর্তমানে যেগুলো মাঠে চলছে সেসব ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে সহসাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টির ব্যাপারে অভিযুক্ত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী সৈকতের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেয়। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও উক্ত বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

Bootstrap Image Preview