Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মধুবাজার বস্তিতে কিছু সময়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৫৭ PM
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:০৭ PM

bdmorning Image Preview


আজকের সকালটা একটু অন্যরকম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অফিসের কাজে বেরিয়ে পড়ি। বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশায় করে চলে যাই মধুবাজার এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখি একদল বাচ্চা খেলা করছে। তারা সবাই ওই এলাকার বস্তিতে থাকে।

বস্তির এলাকাটা খুব বেশি সুন্দর না হলেও তাদের দেখে মনে হয় না তারা বস্তিতে থাকে। কিছুক্ষণ তাদের হাসিমুখ ও খেলাধুলা দেখতে পরিচিত হই রনি শেখ এবং তানভীর হাসান জারিফ নামে দুই শিশুর সাথে। রনি রায়েরবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনীতে পড়ে এবং জারিফ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে পড়ে।
রনির বাবা নেই। মায়ের আদরেই বড় হয়ে উঠছে সে। তার মা আছিয়া বেগম স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করে তাদের সংসার চালায়।

তুমি এখানে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হও? জানতে চাইলে উত্তরে সে বলে, ভাইয়া এই বস্তিতে আমরা সবাই মিলে মিশে থাকি তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু লেখাপড়া দিক থেকে আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে কারণ, অন্যদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা আর আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। তাই চাইলেও আমরা আমাদের অনেক প্রয়োজন পূরণ করতে পারি না। 

এদিকে পাশেই ক্লাস ২ তে পড়ুয়া তানভীরকে সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা বাবা আসাদুর জামান। তার কাছে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এলাকায় কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না দেখেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখানে থাকি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্ন তো পূরণ হয় না আর্থিক সমস্যার কারণে। আমি চাই আমার ছেলে মেয়েকে ভালো জায়গায় পড়াতে ভালো ভাবে রাখতে আর সেটাই করে যাব।

এরপর কিছুক্ষন বস্তিটা ঘুরে জানতে পারি বস্তিতে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি বাল্যবিবাহের শিকার এমন এক নারী মোসাঃ রোজী আক্তার (২০) সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বিয়ে হয় ২০১১ সালে। বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যায়। রোজীর যখন বিয়ে হয়, তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। বর্তমান তার বয়স ২০ বছর। নিজের পছন্দের একই বস্তির এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রথমে বিয়েতে মায়ের মত ছিল না, কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয় তাঁকে।

বাল্য বিয়ে সম্পর্কে বস্তির অনেক অভিভাবক  জানান, দারিদ্র্যের কারণে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হচ্ছে, এমনটি নয়। বস্তি এলাকায় ছেলেমেয়েদের প্রেম-বিয়ের প্রতি অল্প বয়সেই একধরনের আসক্তি জন্মায়। এর কারণ হচ্ছে, মা-বাবাকে সকাল হলেই কাজে যেতে হয়। বাসায় ফেরেন বিকেলে। সারা দিন ছেলেমেয়েরা একা থাকে। এই সুযোগে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা হয়। তা থেকে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।

এছাড়া তারা আরও জানান, ভালো ছেলে পেলে অভিভাবকেরা তাকে হাতছাড়া করতে চান না। মেয়ের বয়স যত কমই হোক না কেন, তাকে বিয়ে দেন। ভালো ছেলে বলতে ঠিক মত আয়-রোজগার তাঁরা বোঝেন ঠিকমতো আয়-রোজগার করে। নেশা করে না। সংসারের খেয়াল রাখে। বাজার-সদাই করে। এ ছাড়া অনেক সময় বস্তির প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সন্ত্রাসীদের চাপেও মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা।

Bootstrap Image Preview