Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ তে কি আছে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৩২ PM
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩২ PM

bdmorning Image Preview


আরিফ চৌধুরী শুভ।।

চট্টগ্রাম বিভাগের ঐতিহ্যবাহী ছোট্ট জেলা লক্ষ্মীপুরকে নিয়ে লেখা ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইটি লিখেছেন লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সন্ধানী সাংবাদিক ও শিক্ষক সানা উল্লাহ সানু। লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের উৎপত্তির পর থেকে রাষ্ট্র হওয়ার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তথ্য আকারে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ তে।

শনিবার ২৭ অক্টোবর, সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বাংলদেশ ইন্সটিটিউট জার্নালিষ্ট ইলেক্টিক মিডিয়া(বিজেম) মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুরের কৃতি সন্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের ডিন ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ড. মাকসুদ কামাল।

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ হাতে লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সন্ধানী সাংবাদিক ও শিক্ষক সানা উল্লাহ সানু

লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমেদ ভূইঁয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, গুসি আর্ন্তজাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপ’র প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান, এনএসআইয়ের সাবেক অতিরিক্ত মহা পরিচালক শামছুল আমিন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন পাঠান, সহকারি পুলিশ সুপার মিরাজুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ ইস্টিটিউট অব জার্নালিজম এন্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (বিজেম) নির্বাহী পরিচালক মির্জা তারেকুল কাদের, এনটিভির বার্তা সম্পাদক আবদুস সহিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি সহকারি প্রক্টোর ড. শামছুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাম্মী আক্তার সুরভী, সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবি ড. বদরুল হাসান কাঁচি, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পলোয়ান।

এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং লক্ষ্মীপুরের সন্তান শাম্মী আক্তার, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান,  ডরপের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান,  বাংলদেশ ইন্সটিটিউট জার্নালিষ্ট ইলেক্টিক মিডিয়া(বিজেম) প্রতিষ্ঠা নির্বাহী পরিচালক মিরাজ তারেকুল কাদের উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু, হাজী সিরাজুল ইসলাম বাবুল আইয়ুব, লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবি রহমত উল্লাহ বিপ্লব, সাংবাদিক রিয়াদ, মো. আবদুর রব, মাওলানা আবদুল্লাহ আল ইস্রাফিল প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মাকসুদ কামাল বলেন, আমি লক্ষ্মীপুরের সন্তান। যাদের দেশপ্রেম আছে, অঞ্চল প্রেম আছে, তারা এই রকম একটি অসাধারণ কাজ করতে পারে। একজন লেখকের প্রাপ্তি হলো তার কাজের স্বীকৃতি। আজ আমরা এই মঞ্চে তাকে সেটি দিয়ে যাচ্ছি তার দীর্ঘ পরিশ্রমের জন্যে। আমাদের সকলের উচিত প্রত্যেকের পরিশ্রমকে সম্মানের সাথে দেখা। ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’র ক্ষেত্রে আমি বলবো লেখক তার কাজটি সাধ্যমতো করেছেন। আমি যদি কপিরাইট আইনের কথা বলি, তাহলে ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ লেখকের অনেক বড় একটি সম্পদ, কিন্তু আমি যদি একটি তথ্যবহুল ভালো বইকে একটি জাতির জ্ঞানের আধার হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে এই বইটি আমাদের সবার সম্পদ। তাই আমাদের সবার উচিত অন্তত লক্ষ্মীপুরকে জানার জন্যে হলেও ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ পড়া।

তিনি বিদেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের যতটি স্ট্রেট আছে, প্রত্যেকটি স্ট্রেটকে তাদের দেশের গর্ভনর প্রতিনিধিত্ব করেন। এমনকি ভারতেও রাজ্য সরকার তাদের রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ বলে আমাদের সেই সুযোগ কম। ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ লক্ষ্মীপুরের মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যে একটি তথ্যবহুল প্রয়োজনীয় বই হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইটির কিছু অংশ আমি পড়ে দেখেছি তিন দিন আগে হাতে পাওয়ার পর।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন বইয়ের সম্পাদনা সমন্বয়কারী ও উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু। গ্রন্থের বিষয়সূচি আলোকপাত করেন সম্পাদক সানা উল্লাহ সানু।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও ছোট্ট জেলা লক্ষ্মীপুর দেশের অর্জনে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনে এই জেলার মানুষের অনেক অবদান আছে। গতপরশু  আমার বাসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ও ফারসি বিভাগের একজন শিক্ষক প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, সারাদেশের মানুষকে নম্রতা, ভদ্রতা এবং ধর্মীয় জ্ঞান শিখিয়েছে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ। এসময় ঐ শিক্ষক উদাহরণ দিয়ে বলেন, স্বয়ং জাতির পিতার শিক্ষকই আপনাদের লক্ষ্মীপুরের মানুষ। তিনি জাতির পিতাকে একদম শিশুকাল থেকেই সবকিছু শিখিয়েছেন হাতে কলমে।

নিজেকে লক্ষ্মীপুরের গর্বিত সন্তান মনে করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছে। আমি তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি। মনে রাখবেন যার মেধা যত বেশি, যার যতবেশি তথ্য মজুত আছে, সে ততবেশি সমবৃদ্ধ। ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ তথ্য সমবৃদ্ধ বই বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের ঐ অঞ্চলের মানুষের এই জিনিসটি আছে। তারা যেখানে যায়, সেখানে তাদের মেধার মাধ্যমে নেতৃতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। বাংলাদেশের নেতৃত্বে আমাদের অঞ্চলের মানুষ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমি আশা করছি।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, অামরা চেয়েছি এমন একটা বই যেটা পুরো লক্ষ্মীপুরকে এক সুতোয় গাঁথতে পারবে। আমরা আশা করি ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ তেমনই একটি বই হবে। অামি সব সময় আমার তরফ থেকে এই বইয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্যে সহযোগিতার দরজা খোলা রাখার ঘোষণা দিচ্ছি।

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’র লেখক সানা উল্লাহ সানু বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার মৌলিক সব তথ্য নিয়ে বইটি তৈরি করা হয়েছে। বইটিতে কে কোথায়, কি অবস্থায় আছে,  কার কি অবদান আছে এই জেলা এগিয়ে যাবার পেছনে, সেই সব স্থান পেয়েছে। ২০১১ সাল থেকে ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’র তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করি আমি। ২০১২ সালে তালিকা তৈরি করে ধীরে ধীরে কাজ এগিয়ে নিই। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে একটি কাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হই। অনেকের কাছে এই বইয়ের তথ্যের জন্যে গিয়েছি। কিন্তু অনেকেই তখনো জানতো না আমি কেন এই তথ্য সংগ্রহ করতেছি। অনেকেই আবার মনে করতেন আমি সাংবাদিক, হয়তো সংবাদের জন্যে তথ্য তৈরি করেছি। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের জন্যে অনেক বড় একটি পরিকল্পনার কথা আজকের আগে অনেকেরেই অজানা ছিল। আমার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ আজ আপনাদের সামনে হাজির করলাম। আমি কি কাজ করেছি এই বিচারের ভার পাঠকের কাছে। আপনাদের কাছে। আমি জানি না পাঠক কিভাবে নিবেন বইটিকে।

লেখক আরো বলেন, বইটিতে ২৫টি অধ্যায় রয়েছে। প্রাচীন সমতটের অংশ থেকে ভুলুয়া হয়ে লক্ষ্মীপুর কিভাবে আজকের সমবৃদ্ধশীল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে তার সব তুলে ধরা হয়েছে। সমতট যুগ থেকে যত শাসক বৃহত্তর লক্ষ্মীপুরকে শাসন করেছেন তাদের তথ্যও রয়েছে বইটিতে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বর্তমান সময় পযর্ন্ত লক্ষ্মীপুরের জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব কালও রয়েছে। তাছাড়া দেশ ও দেশের বাইরের বিখ্যাত যেসকল ব্যক্তিরা লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন সময় আগমন করেছেন, তাদের আগমনের তথ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের বিখ্যাত স্থাপনা, প্রশাসনিক ভবন এবং ৫৮টি ইউনিয়নের নামকরণসহ নিজস্ব মানচিত্র রয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলার সকল পেশাজীবীর বিবরণ এবং লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান, হাটবাজারের নামকরণের ব্যাখ্যা, এ জেলার ভাষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ইত্যাদির বিবরণ রয়েছে।

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’র ২২তম অধ্যায়ে রয়েছে লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের তথ্য। ২৩ তম অধ্যায়ে লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ আছে।

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’র ২৪ তম অধ্যায়ে আছে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ২০০শত জন গুণি মানুষের তথ্য। এটা চলমান থাকবে।

‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ পাঠকদের জন্যে অডিও ও ভিডিও ভার্সনে বইটি বাজারে আনা হবে। এরই মধ্যে বইটির ভিডিও ভার্সনের জন্যে ৫০ ঘন্টার ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর ২৪ডটকম নামক অনলাইনের মাধ্যমে পাঠকরা এইসব অডিও শুনতে ও ভিডিও দেখতে পারবেন।

বইটিকে সার্বজনীন করার জন্যে এরই মধ্যে আমাজনের সাথে যোগাযোগ করেছেন লেখক। আন্তজার্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইএসএস’তে আবেদন করে অনুমোদনও নিয়েছেন তিনি। খুব শিগরই বইটি আমাজন থেকে বের হবে বলে লেখক আশা প্রকাশ করেছেন।

বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

Bootstrap Image Preview