Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চালে চালে চালকুমড়ার মেলা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:২৪ PM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:২৪ PM

bdmorning Image Preview


জে.ইতি হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলাজুড়ে কৃষকের ঘরের চালে চালে শোভা পাচ্ছে চালকুমড়া। আর কয়েকদিন পর এই কুমড়া দিয়ে বাড়ি বাড়ি তৈরি হবে সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি, মোরব্বা ও হালুয়া। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে আসছে শীত। কার্তিক মাসে সকাল-সন্ধ্যায় হালকা মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আর শীতের আগমনে সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরী করতে হরিপুর উপজেলাজুড়ে গ্রামীণ নারীরা প্রস্থুতি নিচ্ছে।

পুষ্টিকর সবজি হিসাবে আমাদের দেশে চালকুমড়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের চালে এ সবজি ফালানো হয় বলে এটি চালকুমড়া নামে পরিচিত। সবুজ কচি চাল কুমড়া তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। আর পাকা চুনের মতো সাদা চালকুমড়া দিয়ে বড়ি, মোরব্বা ও হালুয়া তৈরী করা হয়।

সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, প্রায় সব গ্রামের বাড়িতে ঘরের চাল ও মাচার উপর পাকা চুনের মত সাদা চালকুমড়া ঝুলছে। উপজেলাজুড়ে গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত। সারা বছরই কম-বেশী কুমড়া বড়ি তৈরী হয়। তবে শীত মৌসুমে এর চহিদা বেশী থাকে। এ মৌসুমে কুমড়া বড়ি তৈরী করে বাড়তি আয় করতে পারেন গ্রামীণ নারীরা।

কুমড়াবড়ি তৈরীর প্রধান উপকরণ চাল কুমড়া ও মাসকালাই ডাল। শীত মৌসুমজুড়ে উপজেলার বাড়ি বাড়ি চলবে কুমড়া বড়ি তৈরি এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাবে এই সুস্বাদু খাবার কুমড়া বড়ি।

ডাঙ্গীপাড়া বটতলা গ্রামের সরেফা বেগম, আঞ্জমা, ডেউটি গ্রামের আলিমা, কুলসুম, শিশুডাঙ্গী গ্রামের রানীসহ আরো কয়েকজন গৃহবধূ জানান, আর একটু শীত পড়লে চলকুমড়া দিয়ে বড়ি বানাবে তারা। নিজেরা সারা বছর খাবে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠাবে। কিছু বড়ি বিক্রি করবো। এক কেজি চাল কুমড়া বড়ি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়।

চাল কুমড়ার গুনাগুন ও পুষ্টি নিয়ে ডা. মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, চালকুমড়ায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। যেমন- আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী এবং এর বীজ কৃমিনাশ করে থাকে। চাল কুমড়ার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অর্জীন রোগ ভাল হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমাদের দেশে বারি চালকুমড়া-১ নামে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে যা বার মাসই চাষ করা যায়। এ ছাড়াও হীরা-৪৫১, উফশী, ভৈরবী, ওয়ান্ডারফুল, সুমাইয়া, হাইব্রিড জাতের জুপিটার এফ-১ পোলষ্টার এফ-১ চালকুমড়া চাষ করা যায়।

চালকুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি উত্তম। সারা বছরই চাল কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে ফেব্রিয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম বীজের দরকার হয়। বীজ লাগানোর ৬০-৭০- দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে।

চাল কুমড়া সবজি হিসাবে খেতে হলে সবুজ হুলযুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। হাট-বাজারে এটি পাওয়া যায়। শহরে এর দাম অনেক বেশি হলেও গ্রামের দিকে অনেক কম। চালকুমড়া বসতবাড়িতে চাষ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ঘরের কোণে খোলা তৈরী করে তাতে ৩-৪টা বীজ বপন করতে হবে। চারা গজালে ও একটু বড় হলে বাঁশের কঞ্চি বা পাটকাটি চারার গোড়ায় পুতে দিয়ে চারাগুলো চালায় তুলে দিতে হবে।

জমিতে চাষ করলে জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করে নিতে হবে। তারপর জমিতে খোলা তৈরী করে প্রতি খোলায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। ২.৫ ফুট চওড়া ২ফুট গভীর গর্ত তৈরী করে ২ থেকে ২.৫০ মিটার দুরে দুরে খোলা তৈরী করে বীজ বুনতে হবে। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ জমিতে ইউরিয়া ১০-১২ কেজি, টিএসপি ৮-১০ কেজি, জিপসাম ৩ কেজি, জিংক অক্রাইড ১০০-১৫০ গ্রাম সার ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৫-৭ দিন আগে জমি তৈরী করার সময় খোলার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

প্রত্যেক খোলায় সুস্থ্য সবল ২-৩টি চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। নিয়মিত বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছাগুলো পরিষ্কার ও গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। জমির মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে মাচা তৈরী করতে হবে।

চাল কুমড়া গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ হয়। তার মধ্যে মাছি পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। এই পোকা প্রথমে চাল কুমড়ার ফুলের মধ্যে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতর খেয়ে ফল নষ্ট করে ফেলে। এ পোকার জন্য ৫০-৬০ ভাগ ফলন নষ্ট হয়। এই পোকা দমন করার প্রথম উপায় হচ্ছে ১ পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলতে হবে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে ও পোকা মারার ফাঁদ তৈরী এবং বিষটোপ ব্যবহার করতে হবে।

Bootstrap Image Preview