ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের লৌকিক এবং প্রচলিত ঝুমুর, টুসু ও ভাদু গান নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত হয়েছে একটি বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান। বাংলা সংস্কৃতির বিলুপ্ত প্রায় শিল্পশৈলীগুলোকে তাদের গানের ভেতর ধরে রাখার জন্যেই আটজন শিল্পীর এই দলটি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
আজ ২৩ অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যা ৬.০০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শিল্পী মনিরা ইসলাম পাপ্পু ও টুম্পা দাশ এর পরিবেশনায় ঝুমুর-টুসু-ভাদু শীর্ষক বিশেষ গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শিল্পী টুম্পা দাশ বলেন, গানগুলোর মাধ্যমে একটি গল্পের মালা বুননের চেষ্টা করেছি আমরা। টুসু এবং ঝুমুর দুই বোন। তাদের ভেতর একজন এক ফরাসির প্রেমে পরে যায় কিন্তু তার প্রনয়ের পরিণাম মেলে না। অন্যদিকে, বোন টুসুর বিয়ে হয়ে যায় এক শহুরে বাবুর সাথে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে এভাবেই দূরে সরে যান তারা।
মনিরা ইসলাম পাপ্পু বিডিমর্নিং কে বলেন, আমরা আমাদের নাটক, গান, নাচের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের সংস্কৃতির বিলুপ্তির সুত্র খুঁজে বের করতে এবং সর্বসাধারণকে সেটা উপলব্ধি করাতে। এই অনুষ্ঠানেও আমরা সেই চেষ্টাই করেছি।
টুসু গানের মূল বিষয়বস্তু লৌকিক ও দেহগত প্রেম। এই গান শিল্পীর কল্পনা, দুঃখ, আনন্দ ও সামাজিক অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করে। কুমারী মেয়ে ও বিবাহিত নারীরা তাঁদের সাংসারিক সুখ দুঃখকে এই সঙ্গীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। এছাড়া সমকালীন রাজনীতির কথাও ব্যাপকভাবে এই গানে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
ভাদু গান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি প্রাচীন লোকগান। এই গান রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা এবং ঝাড়খ- রাজ্যের রাঁচি ও হাজারিবাগ জেলার লৌকিক উৎসব ‘ভাদু উৎসবে’ এই গান গাওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে সামাজিক সচেতনামূলক প্রচারের জন্য ভাদু গান গাওয়া হয়।
ঝুমুর গান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যা রাজ্যের বিস্তির্ণ অঞ্চলে প্রচলিত লোকগীতি বিশেষ। এক সময় ঝুমুর গানগুলি মুখে মুখে রচিত হত এবং কোন ভণিতা বা পদকর্তার উল্লেখ থাকতো না। চৈতন্য পরবর্তী যুগে ভণিতাযুক্ত ঝুমুরের সূচনা হয়। এই ধরনের তিন গানের শিল্পশৈলীর সংমিশ্রণে আয়োজন করা হয় আজকের অনুষ্ঠান।