Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গভীর রাতে রাজধানীতে তরুণীকে হেনস্তা, ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৪৯ PM
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৪৯ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীতে গভীর রাতে তল্লাশি চৌকিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী এক তরুণীর সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ঐ তরুণীর সঙ্গে পুলিশ সদস্যের ‘অশালীন আচরণ’ করতেও দেখা গেছে।

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ওই দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।

জানা যায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রামপুরা এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন পুলিশের একাধিক সদস্য। ওই তরুণী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেন পুলিশ সদস্যরা। ওই তরুণীর ব্যাগ তল্লাশির কথা বলে তার অটোরিকশা থামিয়েছিল পুলিশ। তবে তরুণী একাধিকবার তার ব্যাগ তল্লাশি করতে বললেও তা না করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, তরুণীটিকে নানা আপত্তিকর কথা বলছে পুলিশ সদস্যরা। ভিডিওটি গভীর রাতে করা হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যরা ওই মেয়েটিকে বারবার ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করছেন, এত রাতে তিনি কেন বের হয়েছেন, কোত্থেকে এসেছেন আর কোথায় যাবেন। পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যের ভঙ্গিও ছিল আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর। আর এতেই ক্ষেপেন ওই নারী।

তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মেয়েটিকে অভদ্র, বেয়াদব ইত্যাদি নানা কথা বলার পাশাপাশি একজন পুলিশ সদস্য এমনও বলেছেন, ‘মনে হয় আপনি বিশ্বসুন্দরী’, ‘আমি কি আপনার সাথে টাংকি মারছি?’।

রাজধানীতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে ভিডিওটি করা হয়। তবে সেটি কোথায় করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আর ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের চেহারাও দেখা যায়নি। তবে মেয়েটির মুখে আলো ফেলে তার পুরো চেহারা দেখানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ।

মুখে আলো ফেলে ভিডিও করায় আপত্তি করে ওই তরুণী বারবার বলছিলেন, তার ব্যাগ তল্লাশি করুক, কিন্তু এই কাজ পুলিশ করতে পারে না।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গতকাল রাতে রামপুরা এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে অটোরিকশার যাত্রী ওই তরুণীকে থামিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। এ সময় ওই তরুণীর সঙ্গে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলেন পুলিশের ওই সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করণের কাজ প্রায় শেষ।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই পুলিশ সদস্যরা মিরপুর থেকে রাতে রামপুরায় গিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চূড়ান্ত তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিস্তারিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানাবেন।

ফেসবুকে ভিডিওটি প্রচার করে এটি পুলিশের দায়িত্ব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু জন। এভাবে একজন মানুষের সম্মানহানি করায় পুলিশ সদস্যদের শাস্তিও দাবি করেন তারা। ফেসবুকের সূত্রেই জানা গেছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে ভিডিওটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘নিরপেক্ষ ও সঠিক অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তা লেখেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, পুলিশের চেকপোস্ট এ গভীর রাতে একজন ভদ্র মহিলার সাথে কিছু পুলিশ সদস্যদের ভিডিও সহ কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি পেশাদারি সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে এসেছে। এ নিয়ে অনলাইনে ঘৃণাবোধ না ছডানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।’

কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। অপরাধীকে বিধিমোতাবেক অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ভিডিওটিতে তরুণী ও পুলিশ সদস্যদের কথোপকথনের কিছু অংশ পাথকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো-

তরুণী : আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?

পুলিশ : কীভাবে বলা হয়েছে?

তরুণী : এত ভাব মারেন কেন? মাইয়াগো দেখলে ব্যাগ চেক করেন।

পুলিশ : এই, আপনি কিন্তু এত বিশ্বসুন্দরী না।

তরুণী : সমস্যা কী আপনার?

পুলিশ : না, আপনে তো মনে করছেন, আপনে কী যেন হয়ে গেছেন। আপনাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনার সমস্যা কি?

তরুণী : সমস্যা লাইট সরান। আপনাদের সমস্যা কী?

পুলিশ : এটা আমাদের চেক পোস্ট, আমরা চেক করব।

তরুণী : তো চেক করেন না কেন, এত কথা বলেন কেন?

পুলিশ : আপনে এত কথা বলেন কেন? বেয়াদব মেয়ে। বাসা থেকে ভালো করে এয়া শেখায়নি? আপনাকে ভালো করে বাসা থেকে শিক্ষা দেয়নি?

তরুণী : আপনে বেয়াদব? আপনে আমাকে খারাপ মেয়ে কেন বললেন? এইটা পুলিশের বিহ্যাব (আচরণ) হইলো? ফিল্ডিং মারবেন কেন?

পুলিশ : আপনার সাথে কি ফিল্ডিং মারছি? এই আপনার সাথে কে ফিল্ডিং মারছে?

তরুণী : লাইট সরান, চোখে ধরছেন কেন? ব্যাগে মারেন লাইট, চেক করেন।

পুলিশ : এখন রাত কয়টা বাজে? আড়াইটা বাজে। একটা ভদ্র ফ্যামেলির মেয়েরা…

তরুণী : আমি সারারাত চলবো, আপনার সমস্যা?

পুলিশ : তো আপনে এভাবে অভদ্রর মতো কথা বলছেন কেন? বাসা থেকে আপনাকে ভদ্রতা শিখায়নি?

তরুণী : অভদ্রতো আপনে...

পুলিশ : বাসা কোথায়? কার মেয়ে আপনে? আপনে কার মেয়ে সেটা বলেন।

তরুণী : আমার ঠেকা পরে নাই।

পুলিশ : না, আপনে কোন মিনিস্টারের মেয়ে সেটা বলেন না। আপনে ব্যাগ খোলেন।

তরুণী : না, আপনারা খোলেন।

পুলিশ : না, না আমরা খুলব না তো। আপনার ব্যাগ আপনে দেখাবেন।

তরুণী : এতক্ষণ আমার টাইম নষ্ট করলেন…

পুলিশ : কেন, কেউ কি ওয়েট করতেছে?

তরুণী : কী হইছে? তোর বাপে ওয়েট করতেছে।

পুলিশ : বাসা হচ্ছে ডেমরা, আপনে ওই দিকে কোথায় যান?

তরুণী : হায় প্রশাসন, ভদ্রতা!

পুলিশ : সেটা আপনে কালকে দেখতে পারবেন। পুলিশ ভদ্র না অভদ্র, সেটা কালকে দেখতে পারবেন।

তরুণী : কী, বাল দেখব আমি।

পুলিশ : বাসা থেকে এইটা সেখাইয়া দিছে?

তরুণী :হ্যাঁ (রেগে )

পুলিশ : মানুষের সঙ্গে বাল-ছাল বলা শিখাই দিছে?

তরুণী : অসভ্য, লাইটা নামান।

পুলিশ : ও তো পুরাভাবে অ্যাডিক্টেট, ওতো অ্যাডিক্টেট।

তরুণী : আপনে ওনাকে লাইটটা অফ করতে বলেন।

পুলিশ : আপনে আমার সাথে কথা বলেন। আপনে এত বাড়াবাড়ি করতেছেন কেন?

তরুণী : আমি কেন বাড়াবাড়ি করব? আপনে আমার ব্যাগ চেক করছেন?

পুলিশ : আমরা ব্যাগ চেক করব, নাকি কী চেক করব সেটা আমি দেখতেছি।

তরুণী : কী দেখতেছেন আপনারা?

পুলিশ : আমরা নোংরামো দেখতেছি। আপনে কী মনে করতেছেন, মহিলা মানুষ দেখে… ল্যাং মেরে নিয়ে যাব এখন…।

Bootstrap Image Preview