আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এরশাদ সাহেব একটি দলের চেয়ারম্যান। তিনি নিজের পার্টির প্রোগ্রামে যা খুশি তাই বলতে পারেন। নিজস্ব মতামত দিতেই পারেন।
'জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন' সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য আজ শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির সমাবেশে এরশাদ বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর উদ্দেশে কিছু বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। নির্বাচন নিয়ে এখন অনেক সংশয় রয়েছে। নির্বাচন কখন হবে জানি না। একটি দল ৭ দফা দিয়েছে (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট)। সরকার তা মানতে রাজি নয়। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী মানা সম্ভব নয়। এ অবস্থার মধ্যে আগামী দিনগুলো স্বচ্ছ দিন বলে মনে হয় না আমার।’
মন্ত্রী বলেন, এরশাদ একটি পার্টির চেয়ারম্যান। তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। চিন্তা আছে। আগামী নির্বাচনে তিনি কার সাথে জোট বাঁধবেন নাকি একাই নির্বাচন করবেন এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে আমাদের কিছুই বলার নেই। বর্তমানে তারা সংসদে বিরোধীদল হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সচিব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একটি সময় উল্লেখ করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি যথাসময়েই নির্বাচন হবে। এ নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে জনগণের কোন মূল্য নেই। দেখুন, তারা জোট গঠন করেই বিদেশিদের কাছে গিয়েছে। জনগণের কাছে যায়নি। এতেই তাদের অশুভ চিন্তাটি ধরা পড়ে। তারা জনগণের চিন্তা করে না। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। তারা যে বিএনপির সাথে জোট করেছে সেই জোট ১০ বছরে ১০ মিনিটের কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মাত্র তো ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। খেলার শুরুতেই দুই উইকেট পড়ে গেছে। বাকিটা দেখা যাবে আসন ভাগাভাগির সময় কত ধানে কত চাল?
সিলেটে অনুমতি না পেলেও সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন ব্যবস্থা নিবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনের আগে সিলেটের মাজার জিয়ারত একটি নির্বাচনী ঐতিহ্য হয়ে আছে, সেভাবে তারা যেতে পারে। কিন্তু তারা যদি বিশৃঙ্খলা ঘটানোর জন্যে কোন কাজ করে সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একজন চরিত্রহীন ব্যক্তি। তাকে নিয়ে কথা বলার কি আছে? নারী সাংবাদিকরা তাকে নিয়ে যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা আওয়ামী লীগ সমর্থন করে।
উল্লেখ্য গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের টক শো ‘একাত্তরের জার্নাল’ এ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন- আপনি বলেছেন আপনি নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকেন।’
মাসুদা ভাট্টির এই প্রশ্নে রেগে গিয়ে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নেই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।’
গত ১৮ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছেন, ‘মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে অপরাধ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে তিনি এরকম ব্যক্তি আক্রমণ থেকে বিরত থাকবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি এই দাবি-দাওয়া না মানলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।'
আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একজন নারী সাংবাদিকদে অপমান করেছেন। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটির নিন্দা জানাই। সে একজন চরিত্রহীন ব্যক্তি। তাকে নিয়ে নারী সাংবাদিকরা যে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আমরা তা সমর্থন করি।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক অা ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বিএম মোজাম্মেল, দপ্তর সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অাফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য এস এম কামাল হোসেন, মারুফা অাক্তার পপি প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাটি বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৩৫ মিনিটে এবং সাংবাদিক সম্মেলনটি শুরু হয় ১২টা ৪৬ মিনিটে।