ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া অধিকার আদায় করতে কেরালার প্রাচীন হিন্দু মন্দির সবরীমালায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিক কবিতা জাক্কাল এবং নারী অধিকার কর্মী রেহানা ফাতিমা।
কিন্তু মন্দিরের প্রধান পুরোহিত এবং ভক্তদের প্রতিরোধে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে।
ঋতুমতী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এরকম ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের ওই মন্দিরে প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট শতাব্দী প্রাচীন ওই নিয়ম বদল করে সব বয়সের নারীদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দিয়েছে। আর তা নিয়ে গত কদিন ধরেই সেখানে চলছে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ, যাতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন স্থানীয় নারীরাও।
আজ যে দুজন নারী মন্দিরে যেতে গিয়েছিলেন, তাদের একজন রেহানা ফতিমা। তিনি কেরালার পরিচিত মডেল এবং বেশ কট্টর ধরণের নারীবাদী। আর অন্যজন হায়দ্রাবাদের এক সাংবাদিক কবিতা জাক্কাল।
প্রতিরোধ হতে পারে, এরকম আশঙ্কাতেই নাটকীয়ভাবে ওই দুই নারীকে কয়েকশো পুলিশ ঘিরে রেখে রায়ট-গিয়ার বা দাঙ্গা প্রতিরোধী বর্ম, হেলমেট পরিয়ে মন্দিরের প্রায় সামনে অবধি নিয়ে গিয়েছিল।
জাতীয় সংবাদমাধ্যম সকাল থেকেই এই দুজনের যাত্রাপথের সব খবরাখবর ক্রমাগত জানাতে গিয়ে বলছিল যে ইতিহাস গড়তে চলেছেন এই দুই নারী।
কারণ শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরে ঋতুমতী হওয়ার বয়সের কোনও নারী কখনও প্রবেশ করেন নি। পাহাড়ী পথে প্রতিবাদও চলছিল, কিন্তু শেষমেশ মন্দিরের প্রাঙ্গণ থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূর থেকে তাঁদের ফিরে আসতে হয়। সেখানে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
দুই নারী ফিরে আসেন সেখান থেকেই।
রেহানা ফতিমা পরে বিবিসিকে বলছিলেন, "আমরা প্রবেশ করলে প্রধান পুরোহিত মন্দিরে প্রবেশ করলে তিনি সকলের জন্যই মন্দির বন্ধ করে চলে যাবেন বলে হুমকি দেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা ফিরে আসি মন্দির থেকে মাত্র একশো মিটার দূর থেকে।"
একজন মুসলমান হয়ে কেন মিজ ফতিমা হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করতে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে কৌতুহল তৈরী হয়েছে।
তিনি নিজে বলছেন, "আমি সব ধর্মের প্রতিই তিনি শ্রদ্ধাশীল। আর নিয়ম অনুযায়ী ওই মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সেজন্যই সবরীমালা মন্দিরে যেতে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী, যিনি একজন হিন্দু, তিনিও সঙ্গে ছিলেন।"
এই মন্দিরে যে ভগবান আয়াপ্পার পুজো করা হয়, কথিত আছে যে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন ভাভর নামের এক মুসলমান যোদ্ধা। তাঁর মাজার পরিক্রমা করেই হিন্দু ভক্তদের ওই মন্দিরের পথ ধরাটা নিয়ম। ওই মাজারে যখন মুসলমানরা নামাজ পড়েন, সেই সময়ে হাজারে হাজারে হিন্দু সেখানে পরিক্রমা করতে ঢোকেন - কেউই অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
অনেক মুসলমান যেমন মন্দিরে দর্শন করতে যান, তেমনই হিন্দু তীর্থযাত্রীদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেয় অনেক মুসলমান পরিবার।
মন্দিরে প্রবেশের সময়ে যে কালো পোষাক পরতে হয়, মাথায় ভগবানের কাছে পুজো দেওয়ার জন্য যে কাপড়ের পুঁটলি নিতে হয়, সেই সব নিয়মই রেহানা ফতিমা পালন করেছিলেন আজ।
রেহানা ফতিমা আবার বেশ কট্টর ধরনের নারীবাদীও।
কিছুদিন আগে, কেরালার এক মুসলমান কলেজ অধ্যাপক তাঁর ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে গিয়ে তাঁদের স্তনের সঙ্গে তরমুজের তুলনা করেছিলেন।
রেহানা ফতিমা ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দুটি ছবি পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। একটিতে নিজের নগ্ন স্তন তরমুজ দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন, আর অন্যটিকে তাঁর স্তন উন্মুক্ত ছিল, মুখ ঢাকা ছিল তরমুজে।
এই ছবি পোস্ট করা নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছিল সেই সময়ে।
কেরালার একটি উৎসবে চিরাচরিতভাবে বাঘের মতো ডোরাকাটা রঙ গায়ে দিয়ে শুধুমাত্র পুরষমানুষরা যে নাচ উপস্থাপন করেন, রেহানা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেই বাঘনাচও করেছিলেন প্রথা ভেঙ্গে - গায়ে আর মুখে ডোরাকাটা রঙ মেখে। আজ যখন তিনি মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, সেই সময়েই কোচি শহরে তার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর হয়েছে।