সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার প্রমাণ সম্বলিত অডিও রেকর্ড ও যাবতীয় তথ্য তুরস্কের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া। এই রেকর্ড মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বা অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসলোগু।
শুক্রবার তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এই রেকর্ড তারা কাউকে দেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আঙ্কারা ওই অডিও রেকর্ড হস্তান্তর করেছে এমন খবর উড়িয়ে দেন তিনি।ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে তুরস্কের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানায়, ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যার প্রমাণ সম্বলিত একটি অডিও রেকর্ড পেয়েছেন তারা। কনস্যুলেট ভবনে খাশোগিকে হত্যা এবং তার লাশ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সৌদি আরব।
ওই সাংবাদিক নিখোঁজ রহস্য নিয়ে এই সপ্তাহে রিয়াদ ও আঙ্কারায় জরুরি সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। পম্পেও আঙ্কারা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন খাশোগি মৃত বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি। খাশোগির অন্তর্ধানের ঘটনায় সৌদি আরবের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসলেও তার এই মন্তব্যের পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে পম্পেও এর কাছে সেই অডিও হস্তান্তর করেছে আঙ্কারা। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসলোগুর আলবেনিয়া সফরের সময় সাংবাদিকরা এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘পম্পেও বা কোনও মার্কিন কর্মকর্তার কাছে কোনও অডিও রেকর্ড দেয়নি তুরস্ক। স্বচ্ছ তদন্তে যা উঠে আসবে তা আমরা সারা বিশ্বের সামনে প্রকাশ করবো। আমরা কোনও তথ্য কোনও দেশকে দেবো না।’
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাশোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। তুরস্কের দাবি, তাদের তদন্তকারীদের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তুরস্কে আসা ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার।
তুর্কি তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খাশোগির হাতে সর্বাধুনিক ‘অ্যাপেল ওয়াচ’ ছিল। আর এ ওয়াচের মাধ্যমে সৌদি কনস্যুলেটে তাকে নির্যাতন এবং হত্যার মুহূর্তের অডিও রেকর্ড তার ফোন এবং আইক্লাউডে পৌঁছে গিয়েছিল। এই ফোন ও আইক্লাউড তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমান তার বাগদত্তার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। এখন এসব রেকর্ড তার বাগদত্তার হাত থেকে তুর্কি তদন্তকারীদের কাছে পৌঁছেছে। তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানায় খাশোগির অন্তিম মুহূর্তের অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে আশঙ্কা করা হচ্ছে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
খাশোগির মরদেহের সন্ধানে তুরস্কের জঙ্গলে তল্লাশি শুরু করেছে তদন্তকারীরা। সম্ভাব্য এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের প্রবল চাপের মুখে রয়েছে সৌদি আরব।