Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইনফ্লুয়েঞ্জায় বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ১৮শ’ জনের মৃত্যু হয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৩ PM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু বিশ্বব্যাপী পরিচিত সাধারণ রোগ। কিন্তু এ রোগে বছরে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৭৮০ জনের মৃত্যু হয়।

এমনকি এটি মাঝে মাঝে মহামারী আকার ধারণ করে। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের শীত ঋতুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগ প্রতিকারের জন্য টিকা জরুরি। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালকে আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়মূলক জনস্বাস্থ্য সংকটের শততম বার্ষিকী চিহ্নিত করেছে। কারণ ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯১৮ সালে পৃথিবীব্যপী ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী আকার ধারণ করেছিল। যা স্প্যানিশ ‘ফ্লু’ নামে পরিচিত। সেই ফ্লুতে ৫০ মিলিয়ন লোকের প্রাণহানি ঘটে। তখন প্রায় ৫শ’ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হয়।

১৯৫৭ সালেও বিশ্বে ফ্লুর মহামারী লক্ষ্য করা গেছে। তখন এক মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ১৯৬৮ সালে আরেকটি ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন আনুমানিক ১-৩ মিলিয়ন জীবন প্রদীপ নিভে যায়। ২০০৩ সালে (এইচ৫এন১) বা তথাকথিত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী আকার ধারণ করে। যা প্রাণী এবং মানুষ উভয়কেই আক্রান্ত করে।

২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু (এইচ১এন১) বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যার শুরু মেক্সিকোতে। এটি ২১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ৩ লাখ ৯৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ স্থান বা পাবলিক প্লেস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিস্তারের জন্য বেশ ইতিবাচক। বিশেষ করে বিমান বা বিমানের মতো স্থানগুলো, যেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অনেক মানুষ একত্রে অবস্থান করেন। এসব স্থানে খুব সহজেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। অপরিহার্যভাবে তারা কখনও পরিবর্তনশীল ছদ্মবেশ ধারণ করে। এর কারণ মানুষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এন্টিবডিকে প্রতিহত করা। যখন একটি নতুন ভাইরাস হিসেবে আবির্ভূত হয়, সেটি দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বব্যাপী মানুষের গুরুতর অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা। মাথাব্যথা, নাক ফুলে ওঠা, কাশি হওয়া এবং পেশিব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলো ঋতুভিত্তিক। ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতি বছর সাড়ে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

এ কারণে ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে নিরাপদ থাকতে টিকা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার উত্তর গোলার্ধের শীতকালে এবং একবার দক্ষিণ গোলার্ধের শীতকালে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবল ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রোগ্রামের ম্যানেজার ড. ওয়েনকিং ঝাং বলেন, নতুন ভাইরাস দ্বারা কোন ইনফ্লুয়েঞ্জা সৃষ্টি হলে সেটি মহামারী আকার ধারণ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তবতার নিরিখে প্রকৃত ঘটনা আলোচনা করা হল- ১. বেশিরভাগ মানুষ মনে করে ইনফ্লুয়েঞ্জা গুরুতর কোনো রোগ নয়, তাই টিকা নেয়ার দরকার নেই। অথচ এ রোগে বছরে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

২. অনেকেই মনে করেন ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা থেকেও ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফ্লুর টিকায় একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থাকে। তবে সেটি ইনফ্লুয়েঞ্জা সৃষ্টি করতে পারে না। টিকা গ্রহণের পর যদি সামান্য জ্বর হয়, তবে সেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাধারণ প্রতিক্রিয়া। ৩. অনেকেই মনে করেন ফ্লুর টিকায় গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কিন্তু এটি প্রমাণিত যে ফ্লুর টিকায় গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরল। ৪. অনেকের ধারণা, টিকা গ্রহণের পরও ফ্লু হয়েছে অর্থাৎ টিকা কাজ করে না। প্রকৃত বিষয় হল, বেশিরভাগ ফ্লু ভাইরাসগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় টিকা গ্রহণ সত্ত্বেও ফ্লুতে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।

টিকা হচ্ছে ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার উন্নত ব্যবস্থা। ৫. অনেকেই মনে করেন গর্ভবতী নারীদের টিকা গ্রহণের দরকার নেই। এ ধারণা ভুল।

Bootstrap Image Preview