Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তালায় আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০৬ PM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০৬ PM

bdmorning Image Preview


তালা উপজেলায় আমনের চাষ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। শুধু গত ছয় বছরে আমনের আবাদ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পরিবেশ বিপর্যয়, জমিতে লবণক্ষতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘের করার কারণে উপজেলায় ধানের আবাদ হ্রাস পাচ্ছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে আগামি ১০ বছরে মধ্যে তালা উপজেলায় আমনের উৎপাদন শূন্যের কোটায় নামতে পারে শঙ্কা।

বিগত ৬ বছরে জেলাতে আমন উৎপাদনের চিত্র দেখলে এমনটায় মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে উপজেলাতে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্মাঞ্চল থেকে জেলা শহরের দিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ অব্যাহত রয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ে কাজ না পেয়ে তারা সাতক্ষীরা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে আমন ও ইরি মৌসুমে উপজেলাতে শ্রমিক সংকট প্রবল আকার ধারণ করে।

এদিকে অধীক মজুরী দিয়েও শ্রমিক না পাওয়াতে জেলার মানুষ ধান চাষের প্রতি আগ্রহ কমছে। ফলে আমনের আবাদ কমিয়ে মাছ চাষের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা। এতে কর্মসংস্থান কমে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহমানকাল থেকে এ ধানেই কৃষক তার পরিবারের ভরণপোষণ, পিঠাপুলি, আতিথেয়তাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে তা যেন শুধু স্মৃতি হতে চলেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ৬০ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তালা উপজেলায় ৪ হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হচ্ছে। যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম।

আমন রোপণ শেষ করে বর্তমানে চাষীরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। আগাছা দমন, সার প্রয়োগসহ পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চাষীরা বলছে উপযুক্ত পরামর্শের অভাব, সঠিক সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে সব জমি আমন চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭-১৮ মৌসুমে আমনের আবাদ হয় তালা উপজেলায় ৭ হাজার ৩শ' ১০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হচ্ছে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তালায় ৮ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, ২০১৫-১৬ মৌসুমে তালায় ৯ হাজার ২৫০ জমিতে আমন আবাদ হয়ছে। ফলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ উপজেলাতে আমনের আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ মৌসুমে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সারা দেশে আমন আবাদ এরিয়া ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতি বছর আমনের উৎপাদন বাড়ছে। যেখানে সাতক্ষীরা জেলাতে হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছে, আমন ধানের ফলন বৃদ্ধি করতে ভালো বীজ নির্বাচন, জমি তৈরি, সঠিক সময়ে বপন বা রোপণ, আগাছা দূরীকরণ, সার ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক সেচ দেয়া দরকার। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার মান যাচাই এবং ধানের জাত, জীবনকাল ও ফলন মাত্রার উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা দরকার। ধানে থোড়ের শেষ পর্যায় অথবা শীষের মাথা অল্প একটু বের হওয়ার সাথে সাথে প্রতিরোধমূলক ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করা দরকার।

তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের কৃষক সবুজ জানান, তার ২০ বিঘা জমিতে আগে আমনের চাষ হত। বর্তমানে তিনি আমন আবাদ করে না। তিনি বলেন- ধান চাষ করা একটা ঝামেলার কাজ হয়ে পড়েছে সময়মত শ্রমিক পাওয়া যায় না আর পেলেও মুজুরি দ্বিগুণ চাই। তাই আমি এখন ঘের করছি।

তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি অফিসার অকৃষিবিদ আব্দুল্লাহ-হেল জানান, তালা উপজেলায় আমনের আবাদ কিছুটা কমছে। তবে উৎপাদনের পরিমান বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া নানা কারণে জেলাতে আমন চাষের পরিবর্তে চাষীরা বোরো ধানসহ ঘের করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। আমন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কৃষি কর্মকর্তারা নাননভাবে পরামর্শ প্রদান করছে।

Bootstrap Image Preview