Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

টকশোতে নারী সাংবাদিকে ‘চরিত্রহীন’ বললেন মঈনুল; ড. কামাল কী গণতন্ত্র দেবেন আমাদের?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২১ PM
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে 'চরিত্রহীন' বলে আখ্যায়িত করলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠানে ওই সাংবাদিকের উদ্দেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এরপর নিজের ফেসবুক এ মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি।

তিনি লিখেন, একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আলোচনায় ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন যুক্ত হলে উপস্থাপকের অনুমতি নিয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলেই এই প্রশ্ন তুলছেন যে, আপনি এই ঐক্যফ্রন্ট-এর অায়োজনে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না? তখন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন আমাকে ‘চরিত্রহীন’ বলে গাল দেন।

তার এই গালি শোনার পর যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে:

১. আজকে তফাজ্জল হোসেন মাণিক মিয়া বেঁচে থাকলে কী করতেন?

২. ১/১১-র সময়ে এর হাতে দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রের দায়িত্ব?

৩. এরাই করবে গণতন্ত্র উদ্ধার? যে গণতন্ত্রে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন গালি শুনতে হয়?

৪. আইন এক্ষেত্রে কী বলে?

৫. নারী বলেই চরিত্রহীন বলে গাল দেওয়া যদি এতোটাই সহজ হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতাসীন হলে নারীর অবস্থান কী হবে এদেশে?

৬. ড. কামাল হোসেনর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশে এরকম একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তিকে কী মানায়? এদের সঙ্গে মিলে ড. কামাল হোসেন কী গণতন্ত্র দেবেন আমাদেরকে? চরিত্রহীন বলার গণতন্ত্র?

৭. রাজনীতিকে এতোটা পঁচিয়ে কারা নিজেদের রাজনীতির বাইরের সুশীল সমাজ বলে ১/১১-র সরকার গঠন ও তাকে সমর্থন দিয়েছিল?

এদিকে গতকাল রাতের একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা বলেন, '২০ দলীয় জোটের ঐক্যজোট থেকে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) নামে দুটি দল বের হয়ে গেছে। কারণ তারা বলছে ১/১১ এর যারা কুশীলব, যারা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সে সময় মামলা করেছিল, যারা ‌মাইনাস টু ফর্মুলাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে, আজ তারা বিএনপির পাশে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত মনে হয় আপনার দিকে।'

এ সম্পর্কে আপনি কিছু বলতে চান কি না জানতে চাইলে মঈনুল হোসেন বলেন, 'ইলেকশনের সময় আমি ছিলাম না। ২০০৭ সালের পর আমি চলে আসি। তাহলে হয়তো ইলেকশন এরকম হতো না। কিন্তু ইলেকশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ ভোট পাইলেন। এরপর আমরা হইলাম কুশীলব, শেখ হাসিনা আপনারা হইলেন পবিত্র লোক। এ বিষয়ে আমি আর আলোচনা করতে চাই না। '

পরে মঈনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন- আপনি বলেছেন আপনি নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকেন।'

মাসুদা ভাট্টির এই প্রশ্নে রেগে গিয়ে মঈনুল হোসেন বলেন, 'আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নেই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।'

পরে 'শিক্ষিত ভদ্রমহিলা হিসেবে' অন্য প্রশ্ন করার আহ্বান জানান ব্যারিস্টার মঈনুল। এ সময় মাসুদা ভাট্টি বলেন, 'আপনি শিবিরের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং আপনি সেই অনুষ্ঠানে বলেছেন যে আপনার সঙ্গে শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেই বক্তব্য এখন সব জায়গায় দেখানো হচ্ছে। এ কারণে মানুষ এই প্রশ্ন করছে যে আপনি জামায়াতের হয়ে এখানে উপস্থিত থাকছেন কি না।'

এর জবাবে মঈনুল বলেন, 'আমাকে বাদ দেন। আচ্ছা, ঠিক আছে আপনি কার প্রভু হিসেবে আসছেন?' তখন মাসুদা ভাট্টি বলেন, 'আমি কোনো দলের নই, বরং সাংবাদিক হিসেবে এসেছি।'

তখন মঈনুল হোসেন বলেন, 'আজকে সাংবাদিকদের কেউ বাকশাল করে, আর কেউ বিএনপি করে। তাহলে আপনি কি করেন?' পরে এমন প্রশ্ন বাদ রাখার আহ্বান জানান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

পরে মাসুদা ভাট্টি তার প্রশ্নে বলেন, 'খালেদা জিয়া আজ যে মামলায় জেল খাটছেন সে মামলাটি আপনি দায়ের করেছিলেন। আপনার সময়ে দায়ের করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?'

এ প্রশ্নের জবাবে মঈনুল হোসেন বলেন, 'আজকাল সাংবাদিকরা এমনভাবে দলীয় হয়ে গেছে যে তারা লেখাপড়া জেনে রাজনীতি করে না। আমাদের সময়ে বাববার আমি বলেছি যে দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল।'

অনুষ্ঠানে নির্বাচনে সাত দফা দাবি দিয়ে যুক্তফ্রন্টের এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মঈনুল হোসেন বলেন, 'আমাদের দাবি কে মানবে, কে মানবে না এর ওপর নির্ভর করে আমরা দাবি করি নাই। আমরা চেয়েছি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সংসদীয় গণতন্ত্র ভারতসহ অন্য জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবে নির্বাচন হবে।' সেই নির্বাচনে হারেন বা জেতেন সেটা বড় কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন মঈনুল হোসেন।

Bootstrap Image Preview