Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

খাশোগি হত্যাকাণ্ড: যুক্তরাষ্ট্রকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা দিল সৌদি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:৩০ PM
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:৩০ PM

bdmorning Image Preview


তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে দেশটির বর্তমান বাদশাহ ও যুবরাজ সালমানের কঠোর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০০ মিলিয়ন (প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা) ডলার পরিশোধ করেছে সৌদি আরব।

বুধবার ওই অর্থ সৌদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন সৌদি আরব সফর করছিলেন।

ডেইলি সাবাহর খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য গত আগস্ট মাসে সৌদি আরব এ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ অর্থ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে জামাল খাশোগির বিষয়ে সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের সঙ্গে মিটিং করতে মাইক পম্পেও সৌদি যাওয়ার পরপরই এই বিশাল অর্থের লেনদেন অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।

তাছাড়া অর্থ স্থানান্তরের দিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোল পাল্টে ফেলায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, জামাল খাশোগির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছিল এই অর্থ প্রদানের মাধ্যমে তা অনেকটা স্বাভাবিক হবে।

উল্লেখ্য, খাশোগিকে হত্যা করা হলে সৌদি আরবকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এরপরই ভোল পাল্টে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সৌদি আরবকে এখনি দায়ী করা যাবে না। এটি দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো নানা কারণে সৌদি আরবকে ঘাটাতে চায় না। জামাল খাশোগির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিলেও পাল্টা জবাব দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ।

যে ৫ কারণে পশ্চিমারা সৌদি আরবকে সমীহ করছে সেগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

অস্ত্র ব্যবসা: ২০১৭ সালে অস্ত্র কেনায় যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে, তাতে সৌদি আরব ছিল তিন নম্বরে। সুইডেনের 'স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের' হিসেব এটা। গত বছর কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে সৌদি আরব। আগামী দশ বছরে এই অস্ত্র ক্রয়ের খরচ শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে ৩৫ হাজার কোটি ডলার। হোয়াইট হাউজের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এত বিশাল অংকের অস্ত্র কেনার চুক্তি আর কখনো হয়নি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিও বিরাট অংকের অস্ত্র ব্যবসা করছে সৌদি আরবের সঙ্গে।

তেলের সরবরাহ এবং দাম: বিশ্বে তেলের মওজুদের ১৮ শতাংশ হচ্ছে সৌদি আরবে। তারাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক দেশ। এটি সৌদি আরবকে বর্তমান বিশ্বে বিপুল ক্ষমতা এবং প্রভাব খাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে সৌদি আরব তাদের তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাবে, যদি না অন্যদেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়িয়ে তেলের সরবরাহ একই পর্যায়ে রাখতে পারে।

নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ: পশ্চিমা দেশগুলো আরেকটি যুক্তি দেখায় যে সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ঠিক রাখা এবং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠে তারপরও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে এই একই যুক্তি দিয়েছিলেন।

বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ: সৌদি আরবের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা হারাতে পারে। বর্তমানে সৌদি আরবে মার্কিন পণ্য এবং সেবাখাত প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে। এই ব্যবসার বিরাট অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অনুকুলে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভর করছে এই বাণিজ্যের ওপর। এ বছরেরই আগস্ট মাসে সৌদি আরব কানাডার সঙ্গে সব নতুন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ কানাডা এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল সেদেশে নারী অধিকার এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলায় তাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের যেন মুক্তি দেয়া হয়। সৌদি আরব তখন ক্ষিপ্ত হয়ে একে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে বর্ণনা করে। সৌদি আরব শুধু কানাডা থেকে শস্য আমদানিই বন্ধ করেনি। তারা সৌদি সরকারের বৃত্তি নিয়ে যে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে গিয়েছিল তাদের সবাইকে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়।

আঞ্চলিক জোট: মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব খর্ব করতে সৌদি আরব বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। গত কয়েক দশক ধরেই সুন্নী সৌদি আরব এবং শিয়া ইরানের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা জায়গায়। সিরিয়ার লড়াইয়ে সৌদি আরব সমর্থন দিচ্ছে সেই সব গোষ্ঠীকে, যারা প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাত করতে চায়। অন্যদিকে ইরান আবার রাশিয়ার সঙ্গে মিলে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সাহায্য করছে এই যুদ্ধের মোড় তার পক্ষে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো হবে এবং নতুন অস্ত্র চুক্তি তখন ইরানের সঙ্গে সৌদি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে পারে এমনকী তাদের মধ্যে সমঝোতা পর্যন্ত হতে পারে।

Bootstrap Image Preview