Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কেন রাষ্ট্রপতির পদ হারিয়েছিলেন বি চৌধুরী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:১০ PM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বি চৌধুরী


আলোচনা আর সমালোচনাতেই যেন একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি নানা কারণে আলোচনা অথবা সমালোচনার মুখে পড়েন। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়া নিয়েও আলোচনায় এসেছেন তিনি।

ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হত্যার সময়ই পাশের রুমেই ছিলেন তিনি। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান। আবার কারো কারো মত তিনি পালিয়েছিলেন কোথাও। যাই হোক। পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির আসন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর নভেম্বর মাসে তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু এর কিছু দিন না যেতেই ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। না করলে তাকে ইমপিচমেন্টের শিকার হতে হতো। ২১ জুন বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবনে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন ও বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন।

শুধু রাষ্ট্রপতির পদ নয় দল থেকেও পদত্যাগ করে ২০০৪ সালের ১৩ মার্চে এ বি চৌধুরীর উদ্যোগে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বি চৌধুরী দলের সভাপতির ও এম এ মান্নান মহাসচিব এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উপনির্বাচনে দলটি মুন্সিগঞ্জ ১ আসনে জয়লাভ করে।

সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির যোগদানকে ভালোভাবে নেননি তিনি। বলেছেন একক কোন দলকে ক্ষমতায় বসানোর কাজে তিনি নেই। এ জন্যে বিএনপিকে সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার কথা বলেও মুখ ফিরিয়ে নেন।

২০০২ সালে পদত্যাগ করার সময় তার উপর বিশ্বাস হারানোর অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সে সময় খবরের কাগজে বড় বড় করে লেখা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওপর আস্থা নেই খোদ তার দল বিএনপির সংসদ সদস্যদের।

মূলত সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগের দাবি তোলায় এবং পদত্যাগ না করলে ইমপিচমেন্ট করার হুমকি দেয়ায় সেদিন সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

২০০২ সালের ১৯ জুন বিএনপি সংসদীয় দলের সভা শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সভায় বিএনপির নবীন সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের ক্ষোভের বিষয় ছিল মূলত দুটি।

প্রথমত, রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী কর্তৃক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না যাওয়া, দ্বিতীয়ত, জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা।

আলোচনার সময় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ আনা হয়, সেগুলোর একটি হচ্ছে - তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মুন্সিগঞ্জ সফরের সময় তাকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করেন রাষ্ট্রপতির ছেলে মাহী বি. চৌধুরী, যিনি সেখানকার একটি আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

খবলে বলা হয়, সংসদীয় দলের সভায় বিএনপির একজন সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্টের ছেলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর জন্য তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আমরা যদি এ ধরনের তোরণ নির্মাণ শুরু করি তাহলে কেমন হবে?

সংবাদমাধ্যমে ওই সভার খবর প্রকাশের পরপরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।

এর পরদিন বিএনপির সংসদীয় দলের সভা শেষে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বান জানানো হয়। সেদিন তৎকালীন চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ১৯ এবং ২০ জুন দলের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বিএনপি সংসদীয় দল মাননীয় প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওপরে আস্থা হারিয়েছে বিধায় তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বি চৌধুরীর পদত্যাগের জন্য যেসব কারণের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:

* জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন না করা।

* রাষ্ট্রপতির বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা।

* বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুন্সিগঞ্জে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর তোরণ নির্মাণ।

* রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তব্যে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' ব্যবহার না করা, কারণ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' বিষয়টি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধারণ করে।

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমদকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগসংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা। অধ্যাপক আফতাব আহমদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর অনুমোদন করেছিল। রাষ্ট্রপতি সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরবর্তীতে আফতাব আহমদকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগমকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

* রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ব্যয় বাড়ানো।

* সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন রাষ্ট্রপতি।

* রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাইরে অধিক সংখ্যক জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া।

২০০১ সালে অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমেদ।
বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও মেয়াদ শেষে সাহাবউদ্দিন আহমেদকে আরো ৬ মাস রাষ্ট্রপতি রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। কিন্তু তিনি ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি এতে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল।

বি চৌধুরী অনেকটা প্রকাশ্যে রাষ্ট্রপতির হওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং আরো কিছু সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁর বিষয়ে অনাগ্রহী ছিলেন বলে জানা যায়।

Bootstrap Image Preview