Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লবণাক্ত এলাকায় জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী

রনজিৎ বর্মন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩২ PM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩২ PM

bdmorning Image Preview


সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউপির কুলতলি গ্রামে শাক-সবজি উৎপাদনে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এলাকায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন দরিদ্র কৃষক রতিকান্ত মাঝি (৬০)। 

লবণাক্ততা ও লবণ পানির প্রভাবের মধ্যে বাস করে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিহীন শাক-সবজির স্বাদ, মান নিয়ন্ত্রণে কৃষিতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার উত্তম সেটিই প্রমাণ করলেন কৃষক রতিকান্ত।

ঘরবাড়িসহ মোট ১২ কাঠা জমির মধ্যে মাত্র ৮কাঠা ভিটায় মৌসুমভিত্তিক শাক সবজি উৎপাদন করে ৪ সদস্যের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে মাসিক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন তিনি। এছাড়া নিজেই বীজ সংরক্ষণ করেন এবং অতিরিক্ত বীজ স্থানীয়দের মাঝে বিতরণ করেন। 

কৃষক রতিকান্ত জানান, বাড়ির সকল ময়লা আবর্জনা, হাঁস মুরগির বিষ্ঠা ভিটার এক কোণে গর্ত করে সংরক্ষণ করে পঁচিয়ে  জৈব সার তৈরি করে সারা বছর সবজির ক্ষেতে ব্যবহার করেন। বাড়ির নিম গাছের পাতার শুকনা গুড়া ও মেহগনি গাছের ফল শুকিয়ে বেটে রস বের করে পানির মধ্যে দিয়ে ক্ষতিকর পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে সবজির ক্ষেতে স্প্রে করেন। যার ফলে তার রাসায়নিক সার কীটনাশক ক্রয় করার খরচ বেঁচে যায়। 

তিনি বলেন, জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত শাক সবজির স্বাদ রাসায়নিক ব্যবহারে উৎপাদিত সবজির থেকে বহু গুণে ভিন্ন। তার বাড়ির তৈরি সবজি বাজারে নিয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে বিভিন্ন পেশাজীবি ক্রেতারা তাকে খোঁজাখুজি করেন সবজি ক্রয়ের জন্য। 

কৃষক রতিকান্ত মাঝির এই জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত শাক সবজি ফলনের বিপ্লব দেখে এলাকার আরো অনেকে নিজেরা বাড়িতে জৈব প্রযুক্তিতে সবজি উৎপাদন শুরু করেছেন। 

রতিকান্ত মাঝি জানান, বর্তমানে তার পরিবারে পেটের পীড়া ও চর্ম রোগ কমেছে। গত তিন চার বছর পূর্বে বেসরকারি সংগঠন ‘কারিতাস’ বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের বসত ভিটায় সবজি উৎপাদন শুরু করেন তিনি। তার এ সকল কাজে স্ত্রী গান্ধারী মাঝি সঙ্গে থেকে সহায়তা করেছেন। 

এছাড়াও বাড়ির ছোট একটি পুকুরে দেশীয় মাছ চাষ করে এবং দেড় বিঘা ধানের জমিতে আমন ফসল উৎপাদনে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের মন জয় করেছেন। দিনে দিনে তার নৈপুণ্যতার কারণে  উপজেলা কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন তাকে কৃষক ট্রেইনার হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে নিয়ে যান। 
তিনি বলেন, ‘আইলার কারণে অনেক ফল গাছ হারিয়ে গেছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও অনেক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে উঠেনা।’ 

কৃষক রতিকান্ত সরকাররের দৃষ্টি কামনা করে বলেন, লবণাক্ত এলাকায় শাক সবজি উৎপাদনে লবণাক্ততার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে অন্য কোনো প্রযুক্তি থাকলে এবং সেটি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা জৈব প্রযুক্তিতে ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হবে। 

Bootstrap Image Preview