Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এখনও ‘মুশকিল আসানের’ বিলে ছুটছে অন্ধ বিশ্বাসী মানুষ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৪ AM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৪ AM

bdmorning Image Preview


সপ্তাহখানেক আগেও ছিলো মানুষের স্রোত। সবার গন্তব্য ছিল একটাই কথিত ‘মুশকিল আসানের’ বিল। শুধু স্থানীয় মানুষ নয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে  শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সী মানুষের ঢল ছিলো আই বিলমূখী। কোনো ভাবেই তাদের সরানো যায়নি  ‘মগজ ধোলাইয়ের’ শিকার ওইসব মানুষজনকে। ভ্রান্ত বিশ্বাসের সেই শেকড় পুরোমাত্রায় উৎপাটন করা সম্ভব না হলেও এই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে।

কারা গুজব ছড়িয়ে সরল বিশ্বাসী এই মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করল, তাদের খুঁজে বের করতে এখনো জোরালো কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ।

এদিকে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন চোখ সরিয়ে নেওয়া দিনমান জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া বিলের পানিতে আবারো ডুব দেওয়া থেকে শুরু করে নোংরা পানি পানকারী ভ্রান্ত বিশ্বাসীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

মূলত সামাজিক সচেতনতার ফলেই ‘গুজব বিল’ হিসেবে নতুন করে পরিচিতি পাওয়া স্থানীয় চেচুয়া বিলে আপাতত ঠেকানো গেছে অন্ধ বিশ্বাসী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যদিও এখনো অল্প সংখ্যক কিছু মানুষের উপস্থিতি রয়েছে বিলটিতে।

ত্রিশাল উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের এই বিলমুখী মাটির সড়কে পা ফেলতেই দেখা হলো তিন যুবকের সঙ্গে। ওদের একজন হারুন অর রশিদ (৩০)। বাড়ি দিনাজপুর।

বিলের পানিতে ডুব দিলে কঠিন রোগ ভালো হবে এবং মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এমন বিশ্বাসেই এসেছেন এখানে।

গোসল শেষে স্ত্রীর জন্য বিলের নোংরা পানি বোতলে ভরে হেঁটে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। হারুনের সঙ্গে থাকা দুই যুবক হাবিবুর রহমান (৩২) ও মিন্টু মিয়ার (৩০) বাড়ি আবার ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।

আলাপচারিতায় হাবিবুর জানান, গত ৭ থেকে ৮ দিন আগেও এই বিলে অসংখ্য যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ করেছেন। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ’ টাকা করে ভাড়া মেরেছেন। টাকা উপার্জনের নেশায় বিলের পানিতে সেই সময় ডুব দেওয়া হয়নি।

এখন লোকজনের আনাগোনা কমে যাওয়ায় নিজেরাই বিলটিতে গোসল ও পানি নেওয়ার কাজ সারছেন। তাদের বিশ্বাস- ‘এতো মানুষ মিছে মিছে এমনটি করতে পারে না।’

হারুন, হাবিব ও মিন্টুদের সঙ্গে আলাপের সময়েই আগ বাড়িয়ে যোগ দিলেন স্থানীয় বিরামপুর খাবলাপাড়া এলাকার সেলিনা খাতুন (৪০)। এই নারীর দাবি- ‘কোন ডাক্তরের (ডাক্তার) অষুধ (ওষুধ) কাজে লাগে নাই। বিলের পানিতে গোছল (গোসল) করছি, পানি খাইছি (খেয়েছি), অহন পায়ের ফুলা কমছে, দিব্যি ভালা (ভালো) আছি।’

স্থানীয় চেচুয়া বিলটিকে ঘিরে সেলিনার মধুর গুণকীর্তনের স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারাও জড়ো হতে থাকেন। তবে ফুৎকারে তার এমন বক্তব্যকে উড়িয়ে দিলেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম।

পাল্টা উদাহরণ দিয়ে জাহাঙ্গীরের ভাষ্য- ‘আমার গ্রামের মূসা নামের এক লোক প্যারালাইসিসে (পক্ষঘাত) আক্রান্ত ছিলেন। গুজবে তার পরিবারের লোকজন তাকে বিলে এনে গোসল করিয়েছিলেন। পানি খাইয়েছিলেন। কাজের কাজ কিছু হয়নি। এসব আসলে গুজব। এই ডিজিটাল যুগে মানুষ ভ্রান্ত বিশ্বাসে এমন কাজ করতে পারে, চেচুয়া বিল না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।

তবে গত কয়েক দিনে গুজবে কান দেওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। এক সপ্তাহ আগের তুলনায় মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বিরামপুর উজানপাড়া গ্রামের সোহাগ হোসেন (৩২)। তিনি জানান, সপ্তাহ আগেও জন্ম থেকে দু’পা বাঁকা বা বাক প্রতিবন্ধী মানুষের ভিড় ছিলো বেশি। এখন তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

এই ‘গুজব বিল’কে ঘিরে পুলিশের দৃষ্টি ও পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, ‘এখন দিনে কিছু সংখ্যক মানুষ বিলে যাতায়াত করছে। ফলে আমরা সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এছাড়া শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে আমাদের কঠোর নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে।

গুজব ছড়ানো চক্র শনাক্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে গুজবকারীদের শনাক্ত করতে একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূজা শেষ হলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

Bootstrap Image Preview